শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
সংকট কাটেনি রোহিঙ্গা নিয়ে

ভূমিধসের ঝুঁকিতে দুই লক্ষাধিক

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

ভূমিধসের ঝুঁকিতে দুই লক্ষাধিক

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ঝড়-বন্যা ও ভূমিধসের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, এক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়াও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কমপক্ষে ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা বসতবাড়ি হারাতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কক্সবাজারের বালুখালী ও কুতুপালংয়ের বিস্তীর্ণ বনভূমি এবং টেকনাফের লেদা ও মোছনী ক্যাম্পে নতুন-পুরনোসহ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে দুই লাখ রোহিঙ্গা আগামী বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ইউএনএইচসিআর। রোহিঙ্গাদের জন্য গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী এলাকার ঘন বন উজাড় করে পাহাড়ে নির্মাণ করা হয় হাজার হাজার ঘর। পাহাড়ি ঘন সবুজ গাছপালা ও লতাগুল্ম নির্বিচারে কেটে বসতি নির্মাণ করার কারণে পাহাড় ও ভূমিধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, কক্সবাজার বেল্টের পাহাড়গুলো এমনিতেই বালিময় এবং শুষ্ক। আগে বৃষ্টির পানি সরাসরি মাটিতে পড়ত না গাছ ও লতাগুল্মের কারণে। কিন্তু রোহিঙ্গারা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বন উজাড় করে বসতি নির্মাণের কারণে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এ ছাড়া পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরগুলো এমনিতেই নড়বড়ে। তাই ঝড়-বন্যায় নিমিষেই ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বসতি। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, রিচ এবং এশিয়ান ডিজাসটার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের এই ঝুঁকি বিশ্লেষণ করেছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ক্যাম্পের এক-তৃতীয়াংশ বসতি বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। ফলে পাহাড়ের ঢালে বসবাস করা ৮৫ হাজারের বেশি শরণার্থী ঘরবাড়ি হারাতে পারে। আরও প্রায় ২৫ হাজার শরণার্থী রোহিঙ্গা ভূমিধসের সম্মুখীন হতে পারে। বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণ করা পায়খানা, গোসলখানা, নলকূপ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। বিশ্লেষণে বলা হয়, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশের রাস্তাগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে, জরুরি ত্রাণ ও ওষুধ সামগ্রীর সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের ঝুঁকি সম্পর্কে ইউএনডিপি’র ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট ন্যাশনাল কন্সালটেন্ট ড. গোলাম মাহাবুব সরওয়ার বলেন, ‘উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং, মধুরছড়া ও লাম্বাশিয়া এলাকার ঘন পাহাড়ি বনাঞ্চল কেটে গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি। তাদের রান্নার জ্বালানি হিসেবে গাছের পাশাপাশি পাহাড় খুঁড়ে গাছের শেকড়ও তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে পাহাড়গুলো হয়ে উঠেছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। গাছ মাটিকে ধরে রাখে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি গাছের ওপর পড়ে। ফলে ভূমিক্ষয় হয় না। এখন যেহেতু পাহাড়ে কোনো গাছ নেই, সেহেতু পানি সরাসরি মাটির ওপর পড়বে। এর ফলে মাটি দুর্বল হয়ে পাহাড়ধস ও ভূমিধস হতে পারে।’

দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্যোগ : জেলা প্রশাসক ও ইউএনএইচসিআর বলছে, আসছে বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে সরকার ও অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসকের মতে, উখিয়ার কুতুপালংয়ের পশ্চিমে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন ৫৪০ একর সমতল ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে ইউএনএইচসিআর এরই মধ্যে ১২ হাজার রোহিঙ্গা থাকতে পারে— এমন শেড নির্মাণ করেছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ের খাড়া অংশগুলোকে সমান করার কাজও শুরু করেছে।

এ ছাড়া আগাম সতর্কবার্তা প্রচার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কী কী সমস্যায় পড়তে পারে— সে সম্পর্কে বার্তা পৌঁছিয়ে সতর্ক করা হবে।

সর্বশেষ খবর