শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঠাঁই নেই কোনো পর্যটন কেন্দ্রে

প্রতিদিন ডেস্ক

ঠাঁই নেই কোনো পর্যটন কেন্দ্রে

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা নয় দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পর্যটন। ছুটি কাটাতে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে। ফলে এরই মধ্যে সব পর্যটন এলাকার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউসে ‘হাউসফুল’ অবস্থা। কোথাও ফাঁকা নেই। পর্যটন এলাকাগুলোও পর্যটকে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কক্সবাজার : কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। গতকাল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কক্সবাজারের সব হোটেল বুকিং রয়েছে। নয় দিনের দীর্ঘ ছুটির এই ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার পর্যটক আসা শুরু হয়। গতকাল পর্যটকে টইটম্বুর ছিল কক্সবাজার। এ অবস্থা থাকবে ৫ মে পর্যন্ত। জানা গেছে, আগামী রোজার ঈদের আগে টানা নয় দিনের ছুটির কবলে পড়েছে দেশ। ২৬ এপ্রিল বিকাল থেকে দীর্ঘ এই ছুটির ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ছুটির এই সুযোগে ভ্রমণপিপাসু লোকজন দলবেঁধে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছে। এরই মধ্যে সাগরপাড়ের সব আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউসের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আর পর্যটকের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল ও আজ সাপ্তাহিক ছুটি। ২৯ এপ্রিল বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি। ৩০ এপ্রিল কর্মদিবস থাকলেও পরদিন ১ মে শ্রমিক দিবসের ছুটি। ২ মে থাকছে পবিত্র শবে বরাতের ছুটি। ৩ মে কর্মদিবসে সরকারি অফিস খোলা থাকলেও পরের দুই দিন ৪ ও ৫ মে রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। এই নিয়ে মোট টানা নয় দিন দেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছুটিতে রয়েছেন। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতি বছর ঈদসহ নানা ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটকের ভিড় হয় কক্সবাজারে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ ঈদের ছুটিতে যারা বাড়ি যাবেন তারা এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। তাই ঈদের আগেই টানা নয় দিনের ছুটির কারণে হোটেলগুলোয় পর্যটকের সাড়া পড়েছে। হোটেল-মোটেল ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সি-গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী ইমরুল সিদ্দিকী রুমী বলেন, সি-গাল, ওশান প্যারাডাইস, লংবিচ, সি প্যালেস, সায়মন বিচ রিসোর্ট, রয়েল টিউলিপ হোটেল অ্যান্ড স্পা, প্যাচার দ্বীপের মারমেড ইকো বিচ রিসোর্ট, ইনানির রয়েল টিউলিপ ও কক্সবাজারের নামিদামি তারকা হোটেলগুলোর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিদেশি এনজিওর প্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। এসব তারকা হোটেলে পর্যটকের চাহিদা কম থাকলেও বাকি কক্ষগুলোও বুকিং হয়ে গেছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সহসভাপতি আলহাজ শফিকুর রহমান জানান, দু-তিন দিনের ছুটি পেলেই কক্সবাজার পর্যটকে ভরে যায়। এবার নয় দিনের ছুটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক এসেছেন। সব হোটেল পর্যটকে ভরে গেছে। কক্সবাজার শহরের বিনোদন কেন্দ্র ও শপিং মলে পুলিশের বাড়তি নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, শহরে চুরি-ছিনতাই বন্ধসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশের একাধিক দল মাঠে রয়েছে।

সিলেট : এবার ঈদ আসার দেড় মাসেরও বেশি সময় আগেই হঠাৎ করে যেন ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে সিলেটের পর্যটনপাড়ায়। নয় দিনের মধ্যে সাত দিনের ছুটিতে পর্যটকরা এখন সিলেটমুখী। জানা গেছে, দীর্ঘ ছুটি কাটাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক ছুটে আসছেন সিলেটে। ‘প্রকৃতিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত জাফলং, পান্না সবুজ জলের লালাখাল, সফেদ ঝরনাধারার পাংথুমাই, জলারবন রাতারগুল, জল-পাহাড়ের বিছনাকান্দিসহ সিলেটে বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে খুবই সমাদৃত। সিলেটে পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতেই পর্যটকের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। গতকালও বিপুলসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। আজকালের মধ্যে সিলেটে শতাধিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে। হঠাৎ করে পর্যটকের স্রোতে ঈদের আগেই সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা তুমুল ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। শুধু হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরাই নন, সিলেট শহর থেকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহন খাতেও বইছে আনন্দ। পর্যটকের ঢল যত বেশি হয় ততই পরিবহন খাতসংশ্লিষ্টদের ব্যস্ততা বাড়ে।

এ ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় স্থানীয় পর্যায়ে যেসব ব্যবসায়ী খাবার, সুভেনিরসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করেন, তারাও পর্যটকের ঢলে উচ্ছ্বসিত। সিলেট নগরে মণিপুরিসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের দোকানেও ভিড় করছেন পর্যটক।

সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মিষ্টু দত্ত বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পর্যটক আসছেন। আমাদের হোটেলের বেশির ভাগ কক্ষই বুকিং হয়ে গেছে।’

সিলেট হোটেল ও গেস্টহাউস ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাহমিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পর্যটক সিলেটে আসতে শুরু করেছেন। শনি-রবিবার ব্যস্ততা আরও বাড়বে।’

সর্বশেষ খবর