সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইআরআই-এর গবেষণা

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বেশি জনপ্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির তুলনায় বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয় বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।  বেশ কিছু ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের (এফজিডির) মাধ্যমে ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকে চলা পর্যালোচনা শেষে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আইআরআই তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, এফজিডিতে অধিকাংশরাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। তাদের মতে, দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা এবং বর্তমানে ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের উন্নয়নে  নেওয়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণেই এই ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ের জরিপের মাধ্যমে আইআরআই তাদের ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর প্রতিবেদন প্রদান করা হয় চলতি বছর মার্চ মাসে। আর এ প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক  ক্ষেত্রে সফলতা থাকলেও বাংলাদেশের সবচাইতে বড় দুটি দুর্বলতা তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং আইনের শাসন। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী বিএনপি ও দলটির প্রধান খালেদা জিয়া, বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও পলাতক আসামি তারেক রহমান এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে  নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। এফজিডিতে অংশ  নেওয়া অধিকাংশরাই জানিয়েছেন, সামনের নির্বাচনে বড় প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থাকবে বিএনপি ও জামায়াত। সহিংসতা, স্বৈরশাসন এবং ধর্মীয় চরমপন্থার জন্য তারা নির্বাচনে পিছিয়ে থাকবে বলে জানা যায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে তাদের  বেশির ভাগ এই আর্থিক দুরবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করেননি। অংশগ্রহণকারীরা দুর্নীতিকে ‘গুরুতর’ সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন। তারা অভিমত দেন, এই দুর্নীতিই মানুষের  দৈনন্দিন জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনে জালিয়াতি এবং সহিংসতার ব্যাপারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমান নিয়ে সমালোচনা করেন। তারা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে চান। পাশাপাশি প্রায় সবাই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগ শক্ত রাজনৈতিক অবস্থানে আছে বলেও মন্তব্য করা হয় এই প্রতিবেদনে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগ দেশে জনপ্রিয় বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়াও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে। এফজিডিতে অংশগ্রহণকারীরা নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, দক্ষ  নেতৃত্ব প্রদান এবং ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষিত ও দেশপ্রেমী হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন প্রদানের কথা জানান।

খুলনা থেকে অংশগ্রহণকারী একজন বলেন, যখন তাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমি স্মরণ করি, তখন দেশের উন্নয়নগুলোর কথা স্মরণ হয়। ময়মনসিংহ থেকে আগত অপর এক নারী জানান, দরিদ্র মানুষের পাশে এসে তিনি সর্বদা দাঁড়ান। এফজিডিতে অংশ নেওয়া অপর এক নারী জানান, শেখ হাসিনা মানে বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা।

 দেশে উদীয়মান ধর্মীয় উগ্রবাদ ও নারী ক্ষমতায়নের বিপক্ষে অবস্থানের কারণে বিএনপির মূল শরিক দল জামায়াতে ইসলাম সম্পর্কে তীব্র নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে সমর্থন হারাচ্ছে বিএনপি। আসন্ন নির্বাচনে এ বিষয়গুলো ভালো প্রভাব রাখবে বলে গবেষণায় মত প্রদান করা হয়।

এফজিডিতে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে খালেদা জিয়ার  থেকেও বেশি নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায় বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে। তার সম্পর্ক এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, বিএনপি খালেদা জিয়ার দল। সেখানে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। তারেক রহমান যাই নির্দেশনা দিক না কেন, দলের জন্য তা একটি বাড়তি চাপ হিসেবে কাজ করবে।

তারেক রহমানের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদের তুলনা করে অপর এক অংশগ্রহণকারী বলেন, শেখ হাসিনার ছেলে কত শিক্ষিত। অন্যদিকে তারেক রহমান ধ্বংসাত্মক। অপর এক মন্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ হবে। এ ছাড়া অনেকেই মন্তব্য করেছেন, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানি দল। এ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ‘সন্ত্রাসী দল, মৌলবাদী দল, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি’ এমন বেশ কিছু নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে আলোচনায় মিশ্র মতামত ব্যক্ত করে অংশগ্রহণকারীরা। অনেকেই এর পক্ষে অবস্থান নিলেও এই ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক বলে ব্যাখ্যা করেন অনেকে।

সর্বশেষ খবর