শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফাঁদে প্রবাসীরা

মির্জা মেহেদী তমাল

ফাঁদে প্রবাসীরা

‘আপনি কি প্রবাসী? বাড়তি উপার্জনের জন্য দেশের বাইরে গেছেন? তাহলে প্রবাস থেকেই দেশে টাকা পাঠান বিকাশের মাধ্যমে। আমরা দিচ্ছি রিসেলার প্যানেল। এই ব্যবসা করে মাসে আপনি অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি বিজ্ঞাপন দেখে এর নিচে থাকা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন কাতারে থাকা সুমন।

পরে সুমন হোয়াটসঅ্যাপে ওই নম্বরে যোগাযোগ করেন। জানতে পারেন ওই ব্যবসায়ীর নাম মিলন, বাড়ি নোয়াখালী। কাতার থেকে এর বেশি কিছু জানা সম্ভব না হওয়ায় শুধু কথার ভিত্তিতে শুরু করে দেন ব্যবসা।

সুমন জানান, প্রথমে মিলন নামের ওই ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুমনের বিকাশ রিসেলার প্যানেলে ৩০ হাজার টাকা যোগ করে দেন মিলন। কাতার থেকে যারা বাড়িতে তাত্ক্ষণিক টাকা পাঠাতে চান সুমন তাদের কাছ থেকে প্রতি হাজারে সামান্য কিছু বেশি অর্থ রেখে প্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। এদিকে মিলনের রিসেলার প্যানেল ছিল স্বয়ংক্রিয়। এতে টাকা পাঠানোর নির্দেশনা পাওয়া মাত্র মেশিন নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিত।

‘এভাবেই চলল কয়েক মাস। বাড়তে থাকল তার ব্যবসার পরিধি। রিসেলার প্যানেলে বাড়তে থাকল টাকার পরিমাণ। ফলে মিলনকেও দিতে হতো বেশি পরিমাণ অঙ্কের টাকা।’ —জানান তিনি। তবে সুমনের ব্যবসার মোড় ঘুরে যায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বস্ততার সম্পর্কের একপর্যায়ে তিনি মিলনের কাছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর মিলনের নম্বরটি আর খোলা পান না সুমন। যা আজ অবধি বন্ধ। কোনোভাবেই আর যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।

সুমন আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই! সেই যে ব্যবসা ছেড়েছি, এখন আর ব্যবসা করি না। এখন আর মানুষকে ভরসা পাই না। ফেসবুকে এমন অনেক আইডি দেখি যারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর রিসেলার দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাড়তি লাভের আসায় আর ওই পথে হাঁটিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি নই। এমন প্রতারণার শিকার অনেকেই। বিশেষ করে আমাদের মতো প্রবাসীরা। তাদের লোভ দেখিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রগুলো। কিছুদিন লাভের লোভ দেখিয়ে সবশেষ নিঃস্ব করে দেয় তারা।’ শুধু কাতার নয়; মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অবস্থানকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন যারা, তাদের অনেকে এই ব্যবসা থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু অনেকে আবার নিজেদের লোকজনের মাধ্যমে কোনো ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করে নিশ্চিত হয়ে আবার ব্যবসা করছেন। আবার কেউ অল্প টাকা পরিশোধ করে নিজের কাজের পাশাপাশি এই ব্যবসাও করে যাচ্ছেন। জামিল নামে দুবাইপ্রবাসী একজন জানান, ভাই ভাই বিকাশ রিসেলার নামে একজন রিসেলার ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। এরপর তিনি তার কাছ থেকে বিকাশের রিসেলার নেন এবং ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর কয়েক মাসের মাথায় ভাই ভাই বিকাশ রিসেলারের ফারুক নামের ওই ব্যক্তি তার ১০ হাজার টাকা নিয়ে উধাও হন।

তিনি বলেন, ‘আমার অল্প টাকা গেছে। তবে আমি আরেকজনকে এই ব্যবসা শিখিয়েছিলাম। সেও এই ব্যবসা করত। সে অন্তত ৩৫-৪০ হাজার টাকা ধরা খেয়েছে।’ প্রবাসীরা কী কারণে বিকাশে টাকা পাঠান— এমন প্রশ্নের উত্তরে জামিল বলেন, বিদেশ থেকে অল্প টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে গেলে সময়ের পাশাপাশি বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাড়তি কিছু অর্থও খরচ হয়। তবে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলে সহজেই টাকা পাঠাতে পারেন তারা। ফলে তারা এ মাধ্যমটিকে পছন্দ করছেন এবং ব্যবসায়ীরা বিকাশ রিসেলার মাধ্যমটিকেও গ্রহণ করছেন। এদিকে ফেসবুকে ইংরেজিতে বিকাশ রিসেলার ও বিকাশ লিখে সার্চ দিয়ে অনেক অ্যাকাউন্টের দেখা মেলে। যারা বাড়তি লোভের স্বপ্ন দেখিয়ে মুখরোচক নানা বিজ্ঞাপন আকারে পোস্ট দিয়ে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমো নম্বর দেন। তবে হোয়াটসঅ্যাপে বাংলাদেশি নম্বর দেখলে তারা এ বিষয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখান। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের প্রবাসী পরিচয় দিলে বা দেশের বাইরের নম্বর হলে তাদের আগ্রহের কমতি থাকে না। তবে বিকাশ রিসেলারের অনুমোদনের বিষয়ে জানা যায়, দেশের বাইরে বিকাশের কোনো এজেন্ট বা বুথ নেই এবং বিকাশ রিসেলার বলে কিছু নেই। ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো নিজেদের নম্বর ব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করছে। এ বিষয়ে বিকাশ ওইসব নম্বর বা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর