সোমবার, ৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কমেছে পাসের হার বেড়েছে জিপিএ

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭৭.৭৭ শতাংশ

আকতারুজ্জামান

কমেছে পাসের হার বেড়েছে জিপিএ

বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা —রোহেত রাজীব

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। এতে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন পাস করেছে। মোট পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছর পাস করেছিল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এবার এসএসসি পরীক্ষা জুড়েই ছিল প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ। আন্তমন্ত্রণালয়ের তদন্তেও প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টির সত্যতা  মেলে। সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। প্রশ্ন ফাঁস থাকলেও গত বছরের চেয়ে এ বছর পাসের হার কমেছে দুই দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে এ বছর গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর এক লাখ চার হাজার ৭৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের প্রভাব পড়েনি ফলাফলে। কারণ শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মাত্র ৩০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন পেয়েছিল। পাসের হার কমার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার খাতা আগে ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হতো না, কিন্তু এবার যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই হয়তো পাসের হার একটু কমতে পারে। গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৪৪ হাজার ৬১২ জন বেড়ে গেলেও ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর পাসের হার কমেছে দুই দশমিক ৫৮ শতাংশ। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪২৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৫ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ হার গত বছরের চেয়ে এক দশমিক ৮১ শতাংশ কম। আটটি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৫ জন। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা বেড়েছে চার হাজার ৮৮১ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে দুই লাখ ৩ হাজার ৩৮২ জন। পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে পাঁচ দশমিক ৩১ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে এ বছর তিন হাজার ৩৭১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা বেড়েছে ৭৬১ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এক লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮২ হাজার ৯১৭ জন। গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ছয় দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৪১৩ জন। গত বছরের চেয়ে বেড়েছে ২২৬ জন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সব শিক্ষা বোর্ডেই গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে। তবে সব শিক্ষা বোর্ডেই বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। 

পাসে এগিয়ে মেয়েরা, জিপিএ-৫ এ ছেলেরা : পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে গেছে। এসএসসি ও সমমানে এ বছর ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে আছে। ৫৫ হাজার ৭০১ জন ছাত্র এবং ৫৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

১ হাজার ৫৭৪ স্কুলে শতভাগ পাস : সারা দেশে এক হাজার ৫৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর ২ হাজার ২৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এবার ১০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করতে পারেনি।

রাজধানীতে উল্লাস : রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে দেখা গেছে, ভালো ফল করা ছাত্র-ছাত্রীদের বাঁধভাঙা উল্লাস। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে জিপিএ-৫  পেয়েছে ১ হাজার ৫৬৬ জন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর ১ হাজার ৬১২ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৬১০ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৪১ জন। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মোট ৭৫১ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৬৬ জন। মাইলস্টোন কলেজ থেকে এক হাজার ১৭৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১ হাজার ১৭৮ জন পাস করেছে। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯০ জন। বৃষ্টি বা ভ্যাপসা গরম। কিছুই যেন বাদ সাধতে পারেনি শিক্ষার্থীদের আনন্দে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউল হকসহ অন্য বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে রাজশাহী : শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে আছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে ১৯ লাখ তিন হাজার ৮৬২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার সাত দশমিক ৮৪ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সব থেকে কম জিপিএ পাঁচের হার সিলেট বোর্ডে। এখানে দুই দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের থেকে পাসের হারের দিক থেকেও এগিয়ে আছে রাজশাহী বোর্ড। এ বছর ৮৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে। পাসের হারের দিক দিয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বোর্ডটি। সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে, ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৮১ দশমিক ৪৮, বরিশালে ৭৭ দশমিক ১১, যশোরে ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডের ৭৭ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং কুমিল্লা বোর্ডে ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

ফল বিপর্যয় মানবিকে : এসএসসির ফলাফলে মানবিক বিভাগে ফল বিপর্যয় হয়েছে। সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মানবিকে মাত্র ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস করেছে ৮০ দশমিক ৯১ শতাংশ। বিজ্ঞানে ৯৩ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। ৯৭ হাজার ৭৮০ জন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে। মানবিকে এর সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৩১৯ জন।

ক্যাডেট কলেজে শতভাগ পাস : দেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজ থেকে ৫৮৩ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮০ জন।

বিদেশ : বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৪৫০ জন ছাত্রছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪২২ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯০ জন। সারা দেশে তিন হাজার ৪১৫টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ২৩টি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। সব শিক্ষা বোর্ডে অভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ওয়েবসাইট (www.educationboardresults.gov.bd) থেকে ফল পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল থেকে এসএমএস পাঠিয়েও ফল পাওয়া যাচ্ছে।

 পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ করা যাবে আজ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। এ জন্য টেলিটক মোবাইল অপারেটর থেকে মেসেজ অপশনে জঝঈ লিখে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে প্রার্থীর রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় বা পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে ফি প্রযোজ্য হবে। একই মেসেজে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে সাবজেক্ট কোড পর্যায়ক্রমে কমা (,) দিয়ে লিখতে হবে। প্রসঙ্গত, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। লিখিত সৃজনশীল অংশের পরীক্ষা চলে ২৪ তারিখ পর্যন্ত।

অন্যান্য বোর্ডের খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা—

চট্টগ্রাম বোর্ড : মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার পাস করেছে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৯৪ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. তাওয়ারিক আলম গতকাল এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এক হাজার ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ৩৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৯৪ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯০ শতাংশ, মানবিক বিভাগে ৬০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ বছর ছাত্র পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ৬২ হাজার ৭৫৭ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৪৭ হাজার ৬০৮ জন এবং ছাত্রী পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, ৭২ হাজার ৬০৩ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৫৪ হাজার ৪২৯ জন। 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৭৯টি কেন্দ্রে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ২৩টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৭৫৭ জন ছাত্র ও ৭২ হাজার ৩৯১ জন ছাত্রী। বিজ্ঞান বিভাগে ৩০ হাজার ৭৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৭ হাজার ৭০৮ জন, মানবিকে ৪২ হাজার ৫৬২ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৫ হাজার ৫৯২ জন এবং ব্যবসা শিক্ষা শাখায় ৬১ হাজার ৮০১ জনের মধ্যে পাস করেছে ৪৮ হাজার ৭৩৭ জন।

কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাশ বলেন, আমাদের ছাত্ররা বোর্ডে প্রথম হওয়ার সম্মান ধরে রেখেছে। তাদের অভিবাদন জানাই। বোর্ড কারিকুলাম এবং বোর্ড প্রশ্নের ধরন নিয়ে আমাদের শিক্ষকরা অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মেধা, অভিভাবকদের সহযোগিতাসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এবার প্রথম হয়েছি।

রাজশাহী বোর্ড : এবার এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৯০.৭০ শতাংশ। সেই হিসেবে এবার রাজশাহীতে পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ৬৩ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ হাজার ৪৯৮ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৭ হাজার ৩৪৯ জন। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৩ জন। গতকাল দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৫১ হাজার ৪০৬ জন। ২০১৬ সালে এক লাখ ৫২ হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৫১৮ জন। সেবার পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৭০ ভাগ।

শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তরুণ কুমার সরকার জানান, এবার রাজশাহী বোর্ডের অধীনে দুই হাজার ৬৩২টি স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২৩২টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও কোথাও বড় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ফলে গতবারের চেয়ে এবার বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার মাত্র ১৩ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। তবে গতবারের চেয়ে এবার শতভাগ পাসের স্কুলের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২৯টি। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৮০০টিতে।

কুমিল্লা বোর্ড :  মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার অধীন কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ১ হাজার ৭০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ৬ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো ফলাফল করেছে কুমিল্লা জেলা। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের টপ টুয়েলভ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার পরীক্ষা দিয়েছে ২৪২ জন, পাস করেছে ২৪২ জন। পাসের হার ১০০ ভাগ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮৮ জন। ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ কুমিল্লা থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৯২১ জন, পাস করেছে ৯১৫ জন। পাসের হার ৯৯.৩৫ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০২ জন। কুমিল্লা নবাব ফয়জুন্নেছা গভ. গার্লস হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৩৭১ জন, পাস করেছে ৩৭০ জন। পাসের হার ৯৯.৭৩ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯৯ জন। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৩৯৫ জন। পাস করেছে ৩৯৫ জন। পাসের হার শতভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩০ জন। কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ১২৩৯ জন। পাস করেছে ১২৩৪ জন। পাসের হার ৯৯.৬০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৮ জন। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলার মাতৃপীঠ গভ. গার্লস হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ২৮০ জন, পাস করেছে ২৭৬ জন। পাসের হার ৯৮.৫৭ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০২ জন। চাঁদপুর আল আমিন একাডেমি থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৫৯২ জন, পাস করেছে ৫৭০ জন। পাসের হার ৯৬.২৮। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৮ জন। ফেনী গভ. গার্লস হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ২৩৬ জন, পাস করেছে ২৩৩ জন। পাসের হার ৯৮.৭৩ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৪ জন। ফেনী গভ. পাইলট হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৩১৬ জন, পাস করেছে ৩১৫ জন। পাসের হার ৯৯.৬৮ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৫ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ২৭৫ জন, পাস করেছে ২৭৫ জন। পাসের হার ১০০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৮ জন। নোয়াখালী জিলা  স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৩৩৯ জন, পাস করেছে ৩৩৪ জন। পাসের হার ৯৮.৫৩ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৫ জন। নোয়াখালী গভ. হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৩৫৫ জন, পাস করেছে ৩৫৪ জন। পাসের হার ৯৯.৭২ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৫ জন।

যশোর বোর্ড : এ বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭৬.৬৪। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৩৯৫ শিক্ষার্থী। গতবারের তুলনায় এ বোর্ডে পাসের হার কিছুটা কমলেও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৮০.০৪। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৪৬০ শিক্ষার্থী।

গতকাল দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করেন যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র। তিনি বলেন, বিভিন্ন সূচকে এবার যশোর বোর্ডের ফলাফল আশাব্যঞ্জক। গত বছরের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। ভালো শিক্ষার্থীদের জন্য এ বছর ভালো রেজাল্ট হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, মূলত প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে যারা কান দিয়েছে, তাদের ফলাফল খারাপ হয়েছে। গুজবে সময় দিতে গিয়ে তারা পড়ার গতি কমিয়েছে। তিনি বলেন, যশোর বোর্ড থেকে এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৩। গত বছর এ সংখ্যা ছিল দেড়শ। আর পাসের হার শূন্য এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার একটি। গতবার দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাসের হার শূন্য ছিল। এবার মেহেরপুরের গাংনী এসকেআরএস সেকেন্ডারি গার্লস স্কুল থেকে তিনজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যাদের কেউই পাস করতে পারেনি।  এ বছর যশোর বোর্ডের আওতায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ২ হাজার ৫০৭টি বিদ্যালয় থেকে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।

সিলেট বোর্ড : মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সার্বিক ফলাফলে এ বোর্ডে মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ছেলেরা। পাসকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবদিক থেকেই ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবীর আহমদ এ বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন। বোর্ডে এবার পাসের হার ৭০ দশমিক ৪২ ভাগ, যা গত বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৪ ভাগ কম। এ বছর বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ১৯১ জন। গত বছর পেয়েছিল ২ হাজার ৬৬৩ জন শিক্ষার্থী।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, বোর্ডে পাঁচ বছর ধরেই ছাত্ররা নিজেদের সাফল্যের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৪৭ হাজার ৮৬৭ জন ছাত্র পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৩৪ হাজার ১৪৩ জন। পাসের হার ৭১ দশমিক ৩৩ এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রের সংখ্যা ১৭১৮ জন। বোর্ডে ৬১ হাজার ৬১ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৪২ হাজার ৫৬৭ জন। তাদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭১ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪৭৩ জন।

এদিকে, সিলেট বোর্ডে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার অব্যাহত রয়েছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২২ হাজার ৫৫০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২০ হাজার ৮৭৪ জন। তাদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৭ ভাগ। এবার মানবিক বিভাগ থেকে ৭৬ হাজার ৯২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৪৭ হাজার ৪৩৭ জন। তাদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৩৪। এ ছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবার ১০ হাজার ২৮৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৮ হাজার ৩৯৯ জন। তাদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৬৫ ভাগ।

বরিশাল বোর্ড : বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৭.১১ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪২৩ জন। গত বছরের (২ হাজার ২৮৮ জন) তুলনায় এবার জিপিএ-৫ বাড়লেও পাসের হার ০.১৩ ভাগ কমেছে। অংক এবং ইংরেজি বিষয়ে তুলনামূলক ফল খারাপ হওয়ায় সার্বিক ফলাফল অবনমন হয়েছে বলে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের দাবি।

এবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস এবং ৩টি স্কুলের শতভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। গত বছর বরিশালে ৮৭টি স্কুলের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস এবং দুটি স্কুলের শতভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করেছিল।

গতকাল সকাল সোয়া ১১টায় নিজ দফতরে এবারের এসএসসি পরীক্ষার পরিসংখ্যানগত ফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম। পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বরিশাল বোর্ডে এবার ১ হাজার ৪২৫টি স্কুলের ১ লাখ ৩ হাজার ১২৪ জন শিক্ষার্থী ১৭২টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭৯ হাজার ৫২০ জন পাস করেছে। বোর্ডে এবার ফল বিপর্যয় হয়েছে মানবিক বিভাগে। এ বিভাগে পাসের হার সর্বনিম্ন ৬৮.৬৯ ভাগ। বিজ্ঞান বিভাগের পাসের হার সর্বোচ্চ ৮৯.৭০ ভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৯.১৫ ভাগ।

সর্বশেষ খবর