শিরোনাম
সোমবার, ৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঘরের ভিতর পুলিশের স্ত্রীর হাত-পা বাঁধা লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর দারুসসালাম থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ লাগানো ছিল। তার নাম শাহানা আলম খান বিউটি (৪৫)। শনিবার রাতে লালকুঠি এলাকার ৩য় কলোনির ২৫২/১ নম্বর টিনশেড বাসায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়।

পুলিশ বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে। তবে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বিউটির স্বামী পুলিশের এএসআই কামাল হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এতে কাউকে আসামি করা হয়নি। বিউটি ধানমন্ডি ৭ নম্বরে সানিডেল স্কুলের হিসাব রক্ষক ছিলেন। তার বাবা শামসুল আলম খান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ঘটনার সময় তিনি বাসাতেই ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। বিউটির স্বামী কামাল হোসেন মাগুরা সদর থানায় কর্মরত। মৃত্যুর খবর শুনে তিনি ঢাকায় এসেছেন। পারিবারিক সূত্র বলছে, লালকুঠির ওই নিজস্ব বাসাতেই বিউটি ও তার ছোট বোন রোকসানা আলম খানের স্বামী-সন্তানসহ তারা থাকতেন। কয়েকদিন আগে বিউটির ছোট বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে বেড়াতে যান। লালকুঠির ওই বাসাতে বিউটি ও তার বাবা শামসুল আলম খান ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় গৃহপরিচারিকা বাসায় এসে দরজা খোলা দেখতে পায়। ভিতরে ঢুকে বাতি জ্বালিয়ে দেখে বিউটির হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা, মুখে সাদা স্কচটেপ লাগানো মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে থানা পুলিশ খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। এএসআই কামালের প্রথম স্ত্রী বিউটি। ওই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। দারুসসালাম থানার এসআই এনামুল হক জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তিনি লালকুঠি তৃতীয় কলোনিতে যান। ২৫২/১ নম্বর টিনশেড বাসা থেকে বিউটির হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিউটির স্বামী এএসআই মো. কামাল হোসেন বলেন, তার গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলার মোকামপুর গ্রামে। আর বিউটির বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার আক্তারাই গ্রামে। বিউটির বাবা ও বোনের সঙ্গে লালকুটি এলাকার বাসায় থাকতেন। শনিবার সন্ধ্যায় গৃহপরিচারিকা বাসায় এসে দরজা খোলা দেখতে পান। পরে তিনি বাসার ভিতরে ঢুকে বাতি জ্বালিয়ে দেখেন বিউটির হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মরদেহ পড়ে আছে। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। কামাল বলেন, তার কোনো শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই। তবে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বোনের সঙ্গে বিউটির একটু ঝামেলা চলছিল। বিউটি তার প্রথম স্ত্রী। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ঢাকাতেই থাকেন। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান কামাল। তিনি বলেন, ওই বিষয়ে না জানাই ভালো। এদিকে নিহতের ছোট ভাই কামরুল ইসলাম জানান, দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শাহানা আলম খান বিউটি ছিলেন বড়। ছোট বোন ঋতু ও তার স্বামী রইছউদ্দিনসহ তারা ওই বাসায়ই থাকেন। তাদের বাবা সামসুল হকও থাকেন একই বাসায়। তবে বিউটি আলাদা রান্না করে খেতেন। তিনি বলেন, তার জানামতে তাদের কোনো শত্রু নেই। তবে কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে গৃহপরিচারিকা দোলেনা বেগম বলেন, শাহানা আলম খান বিউটির বাসায় তিনি এক বছর দুই মাস ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এসে বাসার কাজ এবং রান্নাবান্না করেন তিনি। দোলেনা বলেন, শাহানা আলম খান বিউটির ছোট বোন ঋতু বেগম, বোনের স্বামী রইছউদ্দিন এবং বাবা সামসুল হক একই বাসায় থাকেন। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় এসে দেখি বাসার গেট খোলা। ভিতরে ঢুকতেই রান্নাঘর থেকে বিউটির বাবা সামসুল হক বলেন, বুয়া আসছ। আমি বলি, জি আসছি। আপা আছে? তখন তিনি আমাকে বলেন, দেখ আছে কি-না? দোলেনা বলেন, আমি ভিতরে গিয়ে দেখি একটি রুমে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বিউটি আপার লাশ পড়ে আছে। আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। বিউটি আপার বাবাও (সামসুল হক) আসেন। কিন্তু তার যে মেয়ে মারা গেছে, তার মাঝে কোনো অনুতাপ দেখলাম না। তাছাড়া অন্যদিন তিনি আমাকে দেখলেও কোনো কথা বলেন না। এ ব্যাপারে দারুসসালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে প্রাথমিকভাবে কারণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, নিজেদের লোকজনের দ্বারাই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার আগে বিউটির ছোট বোন ঋতু ও তার স্বামী রইছউদ্দিন বাড়ি গেলেও এ খবর শুনে তারা না আসায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

যা আছে সুরতহাল প্রতিবেদনে : শাহানা আলম খান বিউটির মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন দারুসসালাম থানার এসআই এনামুল হক। সুরতহাল প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, নিহতের মুখ সাদা স্কচটেপ দিয়ে শক্ত করে পেঁচানো ছিল। নাক থেঁতলানো। নাকের দিকে পানি বের হতে দেখা যায়। গলায় কালচে দাগ ছিল।

 তাছাড়া গলার বামপাশে রক্তাক্ত যখম ছিল। হাত দুটি পাটের রশি দিয়ে পিঠের পিছন দিকে বাঁধা ছিল। ডান পায়ের গোড়ালিতেও পাটের রশি লাগানো দেখা যায়।

সর্বশেষ খবর