মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোট নিয়ে ডান বামে দুই ভাবনা

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে বামদের পৃথক জোট গঠন

বাদল নূর

দেশের বাম ঘরানার কিছু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে পৃথক জোট গঠনের কথা বললেও পরস্পর বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আটকে আছে তাদের জোট গঠন প্রক্রিয়া। দলগুলোর মধ্যে দু-একটি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

বামনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমাজতন্ত্র কায়েম করতে বিভিন্ন সময় তারা ঐক্যবদ্ধ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ও আদর্শিক মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। আগের মতো একই ইস্যুতে এক হয়ে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে না তাদের। বাম দলগুলো ইতিপূর্বে বহুবার তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও তা অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতায় সম্ভব হয়নি। ফলে এ দলগুলো এখন বহুধাবিভক্ত। ঐক্য গড়ে ওঠেনি তাদের মধ্যে। সম্প্রতি জোট গঠনের বিষয়ে কয়েকটি বাম দলের শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা এক হতে পারবেন কি না তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সব বাম দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে পৃথক জোট গঠন করবে কি না—জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিপিবি-বাসদ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাকি বাম দলগুলো তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় আস্থাশীল হয়ে পৃথকভাবে রাজনীতি করছে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন থাকলেও সেটি হবে কি না তা বলা মুশকিল। তবে বাম দলগুলোর এক ছাতার তলে আসা প্রয়োজন। জানা গেছে, দেশে বামপন্থি রাজনৈতিক দল আছে প্রায় দুই ডজন। বর্তমানে বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে আন্দোলন করছে তারা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন এবং রাজপথে থাকার জন্য জোট করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকীর নেতৃত্বে সমমনা সাতটি বাম দলের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি জোট। পৃথকভাবে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। বদরুদ্দীন উমরের জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতৃত্বাধীন চারটি বাম দল নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথক জোট। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নামে ডা. এম এ করিমেরও রয়েছে একটি জোট। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন একটি বাম মোর্চা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট সরকারের শরিক। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডি (আ স ম আবদুর রব) বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর বামদের কয়েকটি দল আছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে। এ ব্যাপারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে একটি বৃহৎ বিকল্প বাম জোট গঠন করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি এর সুফল জনগণ পাবে।’ জানা গেছে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) ও বাংলাদেশ জাসদ (শরীফ নুরুল আম্বিয়া) এবং ওয়ার্কার্স পার্টি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিকল্প বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠনের কথা ভাবছে না। তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ মৌলবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করতে চায়। তাদের মতে, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতসহ সব সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি মোকাবিলা করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বাম দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হলে দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারত। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আমাদের চিন্তা আছে। তবে ঐক্য প্রক্রিয়ায় দেশের সব বাম দল আসবে কি না সে ব্যাপারে আমরা সন্দিহান।’

সর্বশেষ খবর