মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোট নিয়ে ডান বামে দুই ভাবনা

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ভুল আর করতে চায় না জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

যে কোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার মতো ভুল আর করতে চায় না তারা। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের বিজয়ী হওয়া আসনগুলোকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে দলটি। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন দলীয় নেতারা। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে জোটপ্রধান বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও পরিকল্পনা আছে তাদের। এ ক্ষেত্রেও কোনো জটিলতা দেখা দিলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন জামায়াত প্রার্থীরা। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তিন শ্রেণিতে (এ, বি, সি) প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। এভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নীরবে চলছে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা। এরই মধ্যে গোপন জরিপের মাধ্যমে বিগত নির্বাচনে বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদীয় আসনগুলোকে টার্গেট করেই অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ আটক হওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছি। এটা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে।’ নিবন্ধন প্রসঙ্গে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি এখনো উচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন।’ জামায়াতসূত্র জানায়, এ মুহূর্তে দলটি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে নির্বাচনের দিকে। সে ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোটপ্রধান বিএনপিসহ শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সামনে এগোতে চায় দলটি। দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে হাই কোর্টে আপিল করেছে জামায়াত। রায় তাদের পক্ষে আসবে বলে তারা আশাবাদী। এই আপিলের শুনানি কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আগামী নির্বাচনের আগে এই আপিলের কোনো ফয়সালা না হলে কৌশলে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর নির্ভরযোগ্য দুই নেতা জানান, বিএনপি জোটের শরিক হলেও সব আসনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলের কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই মূলত বিএনপি জোটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে জামায়াত। সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে ৩৯টি আসনে নির্বাচন করেছিল জামায়াত। তাই বিগত দিনের বিজয়ী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলো চিহ্নিত করে আগামী নির্বাচনে ২০-দলীয় জোটের কাছে প্রায় ৫০টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী দেওয়ার জোর তদবির চালাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলেও অন্তত ৬০টিতে জোটের সমর্থন নেওয়ার চিন্তা ছিল দলটির। ওই সময় ৪৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল তারা। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯ আসনে জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচন করলেও তৎকালীন বিএনপি জোট তাদের সমর্থন দেয় ৩৪টিতে। তবে বিএনপি জোটের সঙ্গে সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচনে ৫১টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে জামায়াতের। পাশাপাশি দলের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনা ও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে নেতা-কর্মীরাও কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের প্রশ্নে সরকারের শক্ত অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে কৌশল নির্ধারণে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করছেন নেতারা। সেজন্য দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যক্তিদের আপাতত দলের সব পদ-পদবি থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। দলের আগের কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকায় বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি তাকে। কৌশলী হয়ে দলটি বিএনপির সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক রক্ষার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত গোপনে। সেজন্য দলের নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় সুসংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিএনপির সব ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর