মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

খুলনায় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে দুশ্চিন্তা দুই দলেই

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কেসিসি) মেয়র পদে কোনো দলে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এক দলের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে অন্য দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেউ কেউ বহিষ্কারও হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরাই এখন দুই দলের অন্যতম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কোন্দলের প্রভাব দলের মেয়র প্রার্থীর ওপরও পড়তে পারে, শঙ্কা তাদের। জানা গেছে, নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১৩ জন এবং বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী ৬ জন। এছাড়া সংরক্ষিত ১০টি নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ জন। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ২ জন এবং বিএনপিতে ২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। স্থানীয়রা জানান, সর্বশেষ ২০১৩ সালের খুলনা সিটি নির্বাচনে দলীয় বিভেদের কারণে বড় ধরনের খেসারত দিতে হয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগকে। এ কারণে এবারের সিটি নির্বাচনে শুরু থেকেই প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোরতা দেখিয়েছে দলটি। কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল রয়েছে বিএনপিতেও। দলীয় কোন্দলের কারণে বর্তমান চার কাউন্সিলরকেও মনোনয়ন দেয়নি দলটি। পরে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তিন প্রার্থী। আর ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে আলাদা করে কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এদিকে, এ নির্বাচনে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বর্তমান প্যানেল মেয়র-২ শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ২ মে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ হাফিজুর রহমানকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এস এম কামাল বলেন, দলীয় কঠোর সিদ্ধান্তের কারণেই অধিকাংশ ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে কিছু প্রার্থী এখনো রয়ে গেছে, যা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশ রয়েছে এবার নির্বাচনের মাঠে যারাই বিরোধিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশান নেওয়া হবে। খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা : স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র অনুযায়ী, ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. শাহাদাত মিনার। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আব্দুর রাজ্জাক। ২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাকিল আহমেদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. এফ এম জাহিদ হাসান জাকির। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। মো. ইকবাল গাজী বিদ্রোহী প্রার্থী। ৫নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. হারুন-অর-রশীদ। এখানে একই দলের শেখ মোহাম্মদ আলীও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোল্লা হায়দার আলীর পাশাপাশি এমডি মাহফুজুর রহমান লিটন রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম সায়েম মিয়ার সঙ্গে যুবলীগ নেতা কাজী তালাত হোসেন কাউটও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুন্সী আব্দুল ওদুদ পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের জামান মোল্লা। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টিএম আরিফ পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের এসএম রাজুল হাসান রাজু, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী আবুল কালাম আজাদ বিকু পাশাপাশি রয়েছেন মো. নূর ইসলাম শেখ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. ফয়েজুল ইসলাম এর পাশাপাশি বীরেন্দ্র নাথ ঘোষও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আলী আকবর পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের শেখ শহীদ আলী। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আসাদুজ্জামান রাসেলের সঙ্গে শরিফুল ইসলাম মুন্না ও জিয়াউল ইসলাম মন্টু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন। এছাড়া সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেহানা গাজীর সঙ্গে রহিমা আক্তার হেনাও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। সংরক্ষিত ৬ নম্বর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ আমেনা হালিম বেবীর পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের রোজি ইসলাম নদী।

বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা : ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের মো. শামসুল আলম মিল্টন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি প্রার্থী এইচএম আবু সালেকের পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর মো. মুনিরুজ্জামান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী ইমতিয়াজ আলম বাবুল। এখানে সাবেক কাউন্সিলর মোদাচ্ছের হোসেন বাবুল বিদ্রোহী প্রার্থী। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ জামিরুল ইসলামের পাশাপাশি রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও একই দলের মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শমসের আলী মিন্টুর পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের এসএম খায়রুল বাশার, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এসএম মনিরুল ইসলাম পাশাপাশি রয়েছেন একই দলের মো. মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল।এছাড়া সংরক্ষিত ৭ নম্বর আসনে বিএনপির প্রার্থী শামসুন্নাহার লিপি পাশাপাশি রয়েছেন মনোয়ারা সুলতানা কাকলী, সংরক্ষিত ১০ নম্বর আসনে বিএনপি প্রার্থী হোসনেআরা বেগম চাঁদনী পাশাপাশি হাসিনা আকরাম।

সর্বশেষ খবর