মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফরিদপুরে একই ঘরে শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরে একই ঘরে শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ

সাজিয়া বেগম

ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী এলাকার একটি তিনতলা ফ্ল্যাট বাড়িতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন (৩৮) ও কলেজ শিক্ষিকা সাজিয়া বেগম (৩৪)। পুলিশ গত রবিবার রাত ১২টার দিকে ৩২/এ নম্বর বাড়ির নিচতলার রুম থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হোসেনের লাশ এবং মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় কলেজ শিক্ষিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। দুটি লাশই ফারুক হোসেনের রুমে পাওয়া গেছে। রুম থেকে রক্তমাখা একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষিকার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলামকে থানায় রাখা হয়েছে। তবে তাকে আটক দেখানো হয়নি।

বাড়ির মালিকের ছেলে মাহামুদুল হাসান ডেবিট জানান, রাত ১১টার দিকে তিনি একটি গানের অনুষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পর নিচতলার ফারুক হোসেনের রুমের দরজা খোলা দেখতে পান। এ সময় রুমের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখতে পান ফারুকের লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রয়েছে। তাত্ক্ষণিক তিনি কোতোয়ালি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে পুলিশ রুমে গিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, এ সময় সাজিয়া বেগমের মাথা ও বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ফারুক হোসেনের শরীরেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। জানা গেছে, দেড় বছর আগে নুরুল ইসলামের ফ্ল্যাট বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন ফরিদপুরের সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা সাজিয়া বেগম। বেশির ভাগ সময় তিনি তার ছোট ছেলে তাসিনকে (৪) নিয়ে বসবাস করতেন। সাজিয়ার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলাম ব্যবসার সূত্র ধরে বড় ছেলে রিশাদকে (১১) নিয়ে ঢাকার সূত্রাপুরে থাকতেন। এ অবস্থায় ১ মাস ১০ দিন আগে ‘ফরিদপুর সোনালী ব্যাংকে চাকরি করছেন’—এমন পরিচয় দিয়ে ফারুক হোসেন নিচতলা ফ্ল্যাটের একটি রুম ভাড়া নেন। তিনি পরিবার নিয়ে থাকবেন জানালেও রুমটিতে তিনি একাই থাকছিলেন। জানা গেছে, ফারুক হোসেন চাকরি করতেন সোনালী ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ের লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে। কিন্তু তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাসা ভাড়া নেন। নিহত সাজিয়া বেগমের স্বামী শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়িক কারণে তিনি ঢাকায় থাকেন। মাঝে মধ্যে ফরিদপুরে আসেন। গত বুধবার তিনি ফরিদপুরে আসেন। রবিবার সাজিয়া কলেজে যাওয়ার পর বেলা ৩টার দিকে তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। তখন সাজিয়া তাকে বলেছিল, তার (সাজিয়া) বাসায় ফিরতে দেরি হবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায় না ফিরলে তাকে মোবাইলে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কলেজে খোঁজ নিয়েও সাজিয়ার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। রাতে যখন পুলিশ ফারুক ও সাজিয়ার লাশ উদ্ধার করে তখন তিনি বাসায় ছিলেন। ফারুকের রুম থেকে কোনো ধস্তাধস্তি কিংবা অন্য কোনো শব্দ শোনা যায়নি বলে তিনি জানান। এই জোড়া খুনের ঘটনায় কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ, পিবিআই ও র‌্যাব। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরকীয়ার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। ফারুক হোসেন ঢাকায় চাকরি ও বসবাস করলেও কী কারণে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাসা ভাড়া নেন— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কিছু আলামত দেখে মনে করা হচ্ছে দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচিত হবে।

সর্বশেষ খবর