মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

নড়াইলের অরুণিমায় পাখির অভয়ারণ্য

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

নড়াইলের অরুণিমায় পাখির অভয়ারণ্য

নড়াইল জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে কালিয়া উপজেলার পানি পাড়া। সেখানে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র কৃষি পর্যটন কেন্দ্র অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব। সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় এলাকাটির পরিচিতি এখন পাখির গ্রাম হিসেবে। প্রায় ৫০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কয়েক হাজার বাসস্থান। পুরো এলাকাজুড়ে চোখে পড়ে বক, বালিহাস, পানকৌড়ি, শালিক, টিয়া, দোয়েল, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ নানা প্রজাতির কয়েক হাজার পাখি। এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার পাখির প্রজনন ঘটছে। ডিম থেকে ফুটছে বাচ্চা। আর এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য পাখিপ্রেমী মানুষ। প্রকট শীত থেকে রক্ষা পেতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে মাত্র তিন মাসের জন্য বাংলাদেশে অতিথি পাখির অবস্থান করে। আর অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবে বছরের ৯ মাস অতিথি পাখি অবস্থান করছে। শিকারিদের উৎপাত না থাকায় এখানে দিনের পর দিন বাড়ছে পাখির আনাগোনা। গত ১ এপ্রিল নড়াইলের নবাগত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবে এক সেমিনারে যোগ দিয়ে নয়নাভিরাম পাখির রাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘এখানে না এলে জানতেই পারতাম না দেশে এখনো এত প্রজাতির পাখি রয়েছে। এখানে সব প্রজাতির পাখির স্বাধীন বিচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন পাখির রাজ্যে আমি একজন আগন্তুক।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে যাচ্ছে আর আসছে। ডিম থেকে প্রজনন ঘটছে পাখির বাচ্চার। এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। আর বাড়ছে পাখির কলতান।

এই কলতানে মুখোরিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অপরূপ পরিবেশ। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য পাখিপ্রেমী মানুষ। পাখিপ্রেমী ফারজানা আজিজ বেবী বলেন, একসঙ্গে এত পাখির সমাগম আগে কোথাও দেখিনি। আর নড়াইলের আরেক দর্শনার্থী অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম তার মনের ভাব প্রকাশ করলেন এভাবে, এখানে লেকের জলে ভাসমান পাখি দেখে আমি অভিভূত। আর লেকের দুই পাড়ের অসংখ্য গাছের ডালে পাখির সমারোহ দেখে মনে হয় পাখিরা তাদের রাজ্যে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করছে। বাইরের ও এলাকার শিশুরাও এখানকার পাখি দেখে মুগ্ধ। শিশু দর্শনার্থী নেহা বললেন, এখানে এসে গাছে গাছে এত পাখি দেখে খুব ভালো লাগছে। পাখির এই অভয়ারণ্যের অনুকরণে দেশের অনেক স্থানে কৃষি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে অনেকেই আগ্রহী হবেন এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। কৃষির জন্য যে প্রকৃতির কোনো বিকল্প নেই তা এখানে না এলে অজানাই রয়ে যাবে। এখানে শুধু পাখিই নয় বরং পাখিদের বাসস্থান হিসেবে রয়েছে নানা প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ। তাছাড়াও রয়েছে আমাদের দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু পশুপাখি এবং অনন্য সাধারণ প্রাকৃতিক লেক। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান খবির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের একমাত্র অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবেই কৃষি পর্যটন কেন্দ্র পরিণত হয়েছে পাখিদের অভয়ারণ্যে। এই মৌসুমে এরকম হাজার হাজার পাখির আগমন এদেশে কল্পনাতীত। এলাকাবাসীর পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা পেলে এসব পাখি সংরক্ষণে আমাদের সুবিধা হবে। পাখিদের অভয়ারণ্যের এই মনোহর দৃশ্য উপলব্ধি করে বোঝা যায় পৃথিবীর দেশে দেশে এখন কৃষিকে কেন্দ্র করেই পর্যটনের কথা ভাবা উচিত।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর