মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

কেঁচো সার দিয়ে বিষমুক্ত সবজি চাষ

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

কেঁচো সার দিয়ে বিষমুক্ত সবজি চাষ

কেঁচো সার দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন জাহানারা বেগম। করলা, শসা, লাউসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন এই সার দিয়ে। শুধু তাই নয়, এই সার বিক্রি করে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। এই কিষাণীর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া গ্রামে। এক সময় সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকলেও আজ জাহানারা গ্রামের নারীদের কাছে আদর্শ। তার ভাষায়, সংসার চলতই না, খাবার ছিল না। বছরতিনেক আগে আসারুল হকের (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তিনি পরামর্শ দিলেন বাড়ির আঙ্গিনায় প্রাকৃতিক উপায়ে কেঁচো সার তৈরি প্লান্ট করার। তার পরামর্শেই কাজ শুরু করেন। এতে সহযোগিতা করেন আসারুল। কেঁচো সংগ্রহ, সার তৈরি, সার রাখার জন্য রিং— সবকিছু তিনিই প্রথম সরবরাহ করেন। এক মাসের মধ্যেই ফল পেতে শুরু করেন জাহানারা। দুই তিনটা রিং থেকে এখন ২০টা রিং-এ সার তৈরি করছেন। সেই সার বাড়ির আঙ্গিনায় করলা, শসা ও লাউয়ের জমিতে ব্যবহার করছেন।

সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ব্যবহারের পর বাকিটুকু বিক্রি করছেন। এতে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। তার দেখাদেখি ওই গ্রামের আরও ৫০ পরিবার কেঁচো সার তৈরি করছেন। তারাও আলোর মুখ দেখছেন। সেই সার ব্যবহার করে ফলিয়েছেন বিষমুক্ত সবজি।

এলাকার আরেক কিষাণী ফরিদা খাতুন জানান, জমিতে কেঁচো থেকে উৎপাদিত সার ব্যবহার করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন। এ জন্য তারা কেঁচো উৎপাদন, ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার ও বাজারজাতকরণে আগ্রহী হয়েছেন। এতে সারের খরচ কমেছে ও ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করছেন তারা। জাহানারার স্বামী মন্টু মিয়াও তার কাজে সহযোগিতা করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। এখন বাড়িতে শুধু স্বামী-স্ত্রী দুজন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিত্তিপাড়া ব্লক) আসারুল হক বলেন, জাহানারার দেখাদেখি বিত্তিপাড়া গ্রামে অন্তত ৫০ পরিবার কেঁচো সার তৈরি করছেন এবং জমিতে ব্যবহার করছেন। তাদের বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেন। চাষিদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে অন্য গ্রামেও।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, গোবর কেঁচোর পাকস্থলি থেকে ঘুরে আসার ফলে রাসায়নিক মানে গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটে। ফলে অন্যান্য সারের তুলনায় বেশি উত্কৃষ্ট এবং সুষমও হয়। এ জন্য জৈব কেঁচো সার ব্যবহার করলে অন্য সার ব্যবহার হ্রাস পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর