বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

১০ শতাংশ বেতন বৈষম্যের শিকার নারীরা : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের নারীরা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৈষম্যের শিকার বলে জানিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি আরও বলেছে, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের চাকরিতে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি বেতন পান, কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব ক্ষেত্রেই চরম বৈষম্যের শিকার নারী।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে সিপিডি আয়োজিত ‘প্রোমটিং ফিমেল এমপ্লয়মেন্ট ইন বাংলাদেশ ফর রিয়ালাইসিং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টস’ শীর্ষক সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে সংস্থাটির গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. এম. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকাইল হিমনিতি উইনথের। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুর্যোর পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. মিনহাজ মাহমুদ, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু, নারী উদ্যোক্তা সেলিনা কাদের, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিনিধি শারমিন ইসলাম প্রমুখ। ওই সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এম. শামসুল আলম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নারীদের সামাজিকভাবে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকাইল হিমনিতি উইনথের বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে ভালোমানের শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। নারী কর্মসংস্থানের ওপর গবেষণাপত্র তুলে ধরে সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ন্যূনতম দিক দিয়ে প্রথম পর্যায়ের চাকরিতে নারীরা ৮ শতাংশ বেশি মজুরি পান। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ হার ৬ শতাংশ। তৃতীয় থেকে সপ্তম পর্যায় পর্যন্ত নারী-পুরুষের মজুরি সমান। কিন্তু আট পর্যায়ে বৈষম্য শুরু হয়। সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারী। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কম মজুরি পান। এসব বৈষম্য দূর করতে শ্রম আইন সংশোধন প্রয়োজন। কারণ, শ্রম আইন মাত্র ১৬ শতাংশ কর্মজীবীকে সুরক্ষা দিচ্ছে। নারী কর্মসংস্থানের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার সঙ্গে নারীদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি সরাসরি জড়িত। উচ্চশিক্ষিত নারীর প্রায় ৫৩ শতাংশই স্বাবলম্বী। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এ হার ৩১ শতাংশ।

 তিনি নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, চাকরিতে নারীর কোটা রাখতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। আগামী চার দশক বাংলাদেশ একটি জনমিতির লভ্যতার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময়টাতে আমাদের শ্রমবাজারে অনেক তরুণ ছেলেমেয়ে আসবেন। এ সময়টাতে আমাদের নির্ভরশীলতার যে অংশ, যারা কর্মসংস্থানে আছেন, তাদের ওপরে যারা কর্মসংস্থানের বাইরে আছেন, তাদের যে নির্ভরশীলতা, তা ক্রমান্বয়ে কমবে। এই যে সম্ভাবনার জানালা, তা কীভাবে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি, এটাই আমাদের মূল প্রতিপাদ্য। সেখানে আমরা বলতে চেয়েছি, মহিলাদের শ্রমবাজারে ডিসেন্ট ওয়ার্কে অংশগ্রহণই কেবল বাংলাদেশ পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে পারে। এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত যে প্রবণতা দেখছি, তা আমাদের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। নারীর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র শ্রমবাজারে আছে। তাদের অর্ধেকের বেশির শিক্ষা নেই। কাজে নেই এবং কোনো ধরনের প্রশিক্ষণে নেই। নারীর অগ্রযাত্রায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিপিডির বিশেষ এই ফেলো আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই অপ্রতুল। নারীর অগ্রযাত্রায় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নারীদের পরিবহন, বাসস্থান ও সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধান করতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে নীতি নির্ধারণে অনেক ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এটা করতে পারলে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে পারব। সুতরাং সেখানে বাজেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, চাকরিতে কোটা প্রত্যাহার নারীর ক্ষমতায়নে সমতা আনবে না। তাবিথ আউয়াল বলেন, শ্রমবাজারের নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে পরিবহনব্যবস্থা নারীবান্ধব করতে হবে। একই সঙ্গে বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। ডা. মালেকা বানু বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দরকার। শ্রমবাজারে যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। মেয়েদের কাজ পছন্দ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর