রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাত কলেজে ১৮ মাসেও হচ্ছে না এক বছর!

আকতারুজ্জামান

সরকারি তিতুমীর কলেজে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজিতে ভর্তি হয়েছিলেন সোহেল রানা। ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর তার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। ওই পরীক্ষার পর প্রায় ১৮ মাস গেছে, রানা কিন্তু সেই দ্বিতীয় বর্ষেই আছে। এখনো তার চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। বর্ষ পরিবর্তন করতে পরীক্ষা হওয়ার কথা ১২ মাস অন্তর। কিন্তু ১৮ মাসেও বছর হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। শুধু সোহেল রানা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হওয়ার পর রাজধানীতে অবস্থিত সাতটি সরকারি কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী সেশনজটের খপ্পরে পড়ে পিছিয়ে গেছেন। গতকাল সোহেল রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, একই সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া বন্ধুরা কয়েক দিন পর তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেবে। কিন্তু আমরা কবে দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করব সে হিসেবের কোনো কিনারা করতে পারছি না। একই কলেজের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র সাব্বির আহমেদ বলেন, পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবি করতে গিয়ে চোখ হারিয়েছে সিদ্দিকুর রহমান। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলে বলে ক্লান্ত আমরা। আন্দোলন করতে গিয়ে আর চোখ হারাতে চাই না। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশের কোনো খবর নেই। একই সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হওয়া বন্ধুরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাত কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর এসব কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু তাদের সে আশা ফিকে হয়ে হতাশায় রূপ নিয়েছে। সেশনজটের কারণে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও এখন পিছিয়ে আছে। ইডেন মহিলা কলেজের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী শান্তা প্রধান বলেন, প্রথম বর্ষেই আমরা কয়েক মাসের সেশনজটে পড়ে গেছি। গত এপ্রিলে দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি। অথচ আমাদের সেশনে ভর্তি হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসবে। আমরা তাদের থেকে অনেক পিছিয়ে গেলাম। জানা গেছে, প্রায় সব শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পিছিয়ে গেছে। কথা হয়, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নাবিলা বারেক বৃষ্টির সঙ্গে। নাবিলা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর পরীক্ষার প্রশ্নেও অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক প্রশ্নই কমন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষাগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত থাকছেন, যেটি অনেকেই চায় না। বৃষ্টি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সম্মান কোর্স শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছি মাত্র। শিক্ষার্থীদের সাত কলেজের নানা অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, অধিভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা একটু পিছিয়ে গেছে। পরিকল্পনা না থাকায় এ পরিস্থিতি হয়েছে। এসবের দায় তো আমি নিতে পারব না। উপাচার্য আরও বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি হয়েছে তাদের কোনো সমস্যা পোহাতে হবে না আশা করি। তারা ভালো ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলে আসবে।  ইডেন মহিলা কলেজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের আয়েশা হোসেন বলেন, গত জানুয়ারিতে প্রথম বর্ষে তারা ক্লাস শুরু করেছেন। নিয়মিতই তার ক্লাস পরীক্ষা চলছে। সেশনজটের খপ্পরে পড়ে জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বর্তমানে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী এবং ১ হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর