শিরোনাম
রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

শিল্পে সুরক্ষা, বিনিয়োগে দিকনির্দেশনা জরুরি

—মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু

রুহুল আমিন রাসেল

শিল্পে সুরক্ষা, বিনিয়োগে দিকনির্দেশনা জরুরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্প খাতের সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানো ও ব্যাপক হারে শিল্পায়নমুখী দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

তিনি বলেছেন, নির্বাচনের বছরে রাজস্ব আয়ের টার্গেট যেন ব্যবসায়ী-করদাতাদের হয়রানির কারণ না হয়। বাংলাদেশ     প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদের জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের আগামী বাজেট। আগামী বাজেট  প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তযায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বেকারত্ব নিরসন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও দারিদ্র্যবিমোচন, বৈদেশিক সাহায্যের যথাযথ প্রয়োগ, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাড়তি অর্থ আদায়ের প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে অর্থনীতিকে সুসংহতকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যক্তি খাতকে উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দিতে হবে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক এই সহসভাপতি বলেন, বিনিয়োগ ও দেশীয় শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে সুপরিকল্পিত দিকনির্দেশনা থাকা অপরিহার্য। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ বাড়ানো ও শিল্পায়নের প্রসারের বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি। আমদানি শুল্ককর-সংক্রান্ত প্রস্তাবে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পের প্রতিরক্ষণ হিসেবে কিছু খাতে কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে  যৌক্তিক হারের চেয়ে উচ্চহারে শুল্ক-করের পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং সব ক্ষেত্রে মৌলিক কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও তৈরি পণ্যের মধ্যে শুল্ক-করভারের পার্থক্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ রাখা প্রয়োজন। আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার চেয়ে এই শিল্পপতি বলেন, আমদানি পর্যায়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার করা হোক। কারণ এ করে উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধনে বাড়তি চাপ পড়ে। এতে পণ্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, যা ভোক্তা সাধারণ, সার্বিক শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। মোতাহার গ্রুপের এই কর্ণধার ভ্যাট-সংক্রান্ত সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থায় ভোক্তা ও দেশের ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি পণ্য এবং সেবা খাতে নিয়োজিত শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ও সামর্থ্য অনুযায়ী রাজস্ববান্ধব ভ্যাট ব্যবস্থা দরকার। ২০১২ সালের প্রণীত মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন আগামী বছর থেকে বাস্তবায়িত হবে। এই সময়ের মধ্যে ভ্যাট ব্যবস্থার পদ্ধতিগত সংস্কার করতে হবে। প্রতিটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ভ্যাট-সংক্রান্ত বিধিবিধান স্পষ্ট ও সহজ করে নির্ধারণ করতে হবে। ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উেস মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে অব্যাহতি প্রদান করা দরকার। মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আয়কর-সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বর্ধিত হারে উৎপাদন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পণ্য বহুমুখীকরণ ও বিশ্বমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনসহ অধিকতর মূল্য সংযোজনকারী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো উচিত। এ লক্ষ্যে পশ্চাৎ-সংযোজনকারী খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর অবকাশ প্রদান করে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশ ও কর্মসংস্থান সহায়ক রিসাইক্লিং, রিম্যাকিং, রিকন্ডিশনিং, রিইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ নীতিগত ও রাজস্ব সুবিধা দেওয়া উচিত। এতে একদিকে যেমন প্রযুুক্তির প্রসার ঘটবে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয়  হবে। অডিটের নামে হয়রানি বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে বিসিআই সভাপতি বলেন, নিয়মিত কর দেওয়ার পরও অডিটের নামে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই অডিটের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করে করের পরিধি বৃদ্ধি ও মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে রাজস্ব বাড়ানো হোক। চলমান মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর