বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুখঢাকা ভয়ঙ্কর চক্র

মির্জা মেহেদী তমাল

মুখঢাকা ভয়ঙ্কর চক্র

জসিম আহমেদ। কাকরাইল থেকে যাবেন উত্তরা। রাত পোনে ১১টায় তিনি সিএনজিচালিত অটোতে চড়ে রওনা হবেন। এমন সময় বোরকা পরে দুই নারী সেখানে এসে হাজির। তারাও যাবেন একই পথে। কিন্তু কিছু পাচ্ছেন না। জসিম আহমেদ তাদের সিএনজিতে তুলে নেন। মগবাজার ফ্লাইওভারে ওঠার পরই বোরকার সামনের অংশ খুলে ফেলেন। জসিম তাদের দেখেই আঁতকে ওঠেন। এরা নারী নয় হিজড়া। তাদের হাতে বড় ছোরা। জসিমের ঘাড়ে ধরে টাকা পয়সা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে  নেয়। জসিমকে নামিয়ে দেওয়া হয় ফ্লাইওভারেই।

রাজধানী ঢাকায় দিনে দিনে পতিতাবৃত্তি যেমন  বেড়েছে, তার চেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বোরকা পরা নারীরূপী হিজড়া চক্রের প্রতারণা। তাদের সাজগোজ  দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি কোনো নারী নন। পাশের জন কন্ট্রাক্ট করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের ডেরায়।  পেছনে পেছনে যাচ্ছেন তাদের বিশেষ চক্র। অবশেষে টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে। কাকরাইল মোড়, বিজয়নগর, প্রেস ক্লাব, রমনা পার্ক, শিল্পকলা একাডেমির মোড়, পল্টনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যার পরপরই তারা মুখে মেকাপ করে চোখে কাজল দিয়ে সুন্দরী বেশে ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। আর কাস্টমার খুঁজতে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে। যখনই কাউকে পেয়ে যায় তখনই ডেরায় ভরে পুরোদস্তুর এক ছিনতাইকারী বনে যান। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে তাদের অযাচিত দাবিও পূরণ করে থাকেন। বিপাশা হোটেলের কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তার বন্ধু রাজু গত দুই দিন আগে একটি মেয়ের সঙ্গে তার বাসায় গিয়েছিল। পরে জানতে পারল সে হিজড়াদের কবলে পড়েছে। হিজড়া সদস্যরা তার মোবাইল মানিব্যাগ রেখে দেয়। পাশাপাশি তাকে আটকে রেখে আরও টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে তার বন্ধুদের ফোন করলে পুলিশ নিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্যকে দেখা গেল তাদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে। তিনি বলেন, ‘তারা আমার মোবাইল ফোনসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে। এটা নিয়ে তো আর কোথাও অভিযোগ করা যাবে না। আমি চাই এদের অত্যাচার যেন বন্ধ করা হয়। তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লতা নামের এক হিজড়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাম ব্যবহার করে অনেকেই আজেবাজে কাজ করে। তাদের কারণে মানুষ আমাদের সন্দেহ করে। আমরা মানুষের কাছ থেকে শুধু তোলা নেই, চুরি-ছিনতাই করি না।’ মিরা নামের এক যৌনকর্মী বলেন, হিজড়াদের অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ। তারা ৫০০ টাকায় কন্ট্রাক করে ১৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। ফলে সবাই ভয়ে থাকে। ওদের কারণে আমাদের ইনকাম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’ আরেকজন সহকর্মী ছুটে আসতেই থেমে গেল আলাপ। কিছুক্ষণ আগেই ওই মেয়েটি কাকরাইলে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর দুই যুবকের সঙ্গে কথা বলে রিকশায় চড়ে নয়াপল্টনের দিকে যেতে দেখলাম। সেই মেয়েটি ১০ মিনিটে ফিরে এলো। তাদের দিকে কান পেতে শোনা গেল, খদ্দের ছেলে দুটিকে হিজড়াদের হাতে তুলে দিয়ে তার প্রাপ্যটা সে বুঝে নিয়ে ফিরে এসেছে! হঠাৎ দুই পুলিশ কনস্টেবল এসে তাদের ধাওয়া করে। কিন্তু তারা একটু সরে আবার যথারীতি সেখানেই এসে হাজির। তাদের ব্যাপারে চলতি পথের মানুষের অভিযোগও কম নয়। ফুটপাথ দখল করে গ্রুপভিত্তিক দাঁড়িয়ে থাকায় পথচারীদের বাধ্য হয়ে চলতে হচ্ছে মূল সড়ক দিয়ে। অনেকে বাজে মন্তব্যেরও শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর