বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে বাড়ছে জলদস্যুতা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বঙ্গোপসাগরে বাড়ছে জলদস্যুতা

সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগরে দস্যুতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ওই সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় ২০১৭ সালে মোট ১১টি জাহাজে জলদস্যু কর্তৃক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬টি ঘটনা ঘটেছে নোঙর করা জাহাজে এবং ৫টি চলমান জাহাজে। সবকটি ঘটনাই ঘটেছে চট্টগ্রাম বন্দরসংলগ্ন এলাকায় ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে। এশিয়ায় জলদস্যু প্রতিরোধে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দ্য রিজিওনাল কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট অন কমবেটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি অ্যাগেইনস্ট শিপ ইন এশিয়া’ (রিকাপ) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের মতে, বন্দর এলাকায় জলদস্যু দ্বারা জাহাজ আক্রমণের ঘটনা বাড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এর ফলে সংশ্লিষ্ট বন্দর ও ওই রুট সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। তবে বাংলাদেশের জলসীমায় যেসব দস্যুতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে, তা অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের জলসীমায় যে ঘটনা ঘটেছে প্রকৃত অর্থে সেগুলোকে ‘জলদস্যুতা’ না বলে ‘ছিঁচকে চুরি’ জাতীয় ঘটনা বলে অভিহিত করা যায়। গত ১৯ থেকে ২২ মার্চ সিঙ্গাপুরে রিকাপ, আইএসসির গভর্নিং কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এশিয়া অঞ্চলের সামুদ্রিক জাহাজে দস্যুতার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করা হয়। রিকাপের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের অ্যাঙ্করেজ এলাকায় ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে পাইরেসি ইনসিডেন্টস বা জলদস্যুতার ঘটনা (ক্যাটাগরি-২, ৩ ও ৪) বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জলদস্যু দ্বারা জাহাজ আক্রমণের বেশির ভাগ ঘটনায় আক্রমণকারীদের কাছে ছিল ছুরি-জাতীয় হালকা অস্ত্র। রাতের অন্ধকারে তিন থেকে চারজনের গ্রুপ এ ধরনের দস্যুতার ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় জলদস্যুরা সহিংস ছিল না। রিকাপের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে দক্ষিণ এশিয়া সামুদ্রিক অঞ্চলে মোট ১৫টি দস্যুতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৪টি ভারতের জলসীমায়, বাকিগুলো বাংলাদেশের জলসীমায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় এ ধরনের ২টি ঘটনা ঘটেছিল। ওই বছর ভারতে জলদস্যুতার ঘটনা ছিল ১২টি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিঙ্গাপুরে রিকাপ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের বিষয়ে যে তথ্য ছিল আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এগুলোকে কোনোভাবেই জলদস্যুতার ঘটনা বলা যায় না। ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। পানির বোতল... এ-জাতীয় জিনিস চুরি হয়েছে। অনেক সময় মাছ ধরার নৌকাগুলো জাহাজের কাছাকাছি গেলেও তারা দস্যুতার চেষ্টা বলে রিপোর্ট করে দেয়। তার পরও যাতে এ ধরনের চুরির ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে কোস্টগার্ড, নেভিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান সচিব। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের অ্যাঙ্করেজসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলদস্যুতার ঘটনার বিষয়ে ১৭ এপ্রিল একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে। ওই সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) প্রতিনিধি জানান, রিপোর্টে যে ১১টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে এর বেশির ভাগই ছোটখাটো চুরির ঘটনা। রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে এ ঘটনাগুলো ঘটে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের সময় মাছ ধরার নৌকা বা ছোট নৌযান কাছাকাছি পৌঁছালে দস্যুতার আশঙ্কা করে অনেক সময় ‘ফলস কল ইনসিডেন্ট’ হিসেবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। রিকাপের এ ধরনের জলদস্যুতার বিষয়টিকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে মনে করছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের গত মার্চের একটি চিঠিতে আন্তর্জাতিক ‘পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার’ (আইএমবি পিআরসি) কর্তৃক বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজে ‘পাইরেসি’-সংক্রান্ত তথ্যকে ‘অতিরঞ্জিত’ উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত নগণ্যসংখ্যক ছিঁচকে চুরির (পেটি থেফট) ঘটনাকে যাতে নেতিবাচকভাবে অতিরঞ্জিত আকারে ‘পাইরেসি’ হিসেবে চিহ্নিত না করা হয় সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পাইরেসি রিপোর্ট সেন্টারসহ অন্যান্য সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।

সর্বশেষ খবর