শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেহাল আন্ডারপাস-ফুটওভার ব্রিজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বেহাল আন্ডারপাস-ফুটওভার ব্রিজ

গত ৩ এপ্রিল দুই বাসের প্রতিযোগিতায় হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রাণ হারান রাজীব। এরপর ২১ এপ্রিল বনানীতে বিআরটিসির বাস চাপায় পা হারান রোজিনা, ২৯ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে বাসের চাপায় পা হারান রাসেল। রাজধানীতে একের পর এক ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।

দুর্ঘটনা রোধে আন্ডারপাস-ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সচেতন করতে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও নোংরা আবর্জনা এবং ছিনতাই আতঙ্কে ফুটওভার ব্রিজ আন্ডারপাস ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে না মানুষ। কিছু ক্ষেত্রে অসচেতনতাও বড় কারণ। সরেজমিন কারওয়ান বাজার আন্ডারপাসে ঢুকতে গেলেই নাকে আসে মলমূত্রের উৎকট গন্ধ। প্রজাপতি গুহা নামে পরিচিত এই আন্ডারপাস স্থায়ীভাবে ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের জায়গা হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যা বাড়তেই মাদবসেবী এবং ছিনতাইকারীদের আখড়ায় পরিণত হয় এই আন্ডারপাস। রাতে তো দূরের কথা, দিনের বেলায়ও ভিতর দিয়ে যেতে গা ছমছম করে। কারওয়ানবাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আমেনা আহমেদ বলেন, আমি একা কখনো এই আন্ডারপাস দিয়ে যাওয়ার সাহস পাই না। যখন দু-একজনকে যেতে দেখি তখন তাদের সঙ্গে পার হই। তারপরও আন্ডারপাসের ভিতরে বসে থাকা লোকজন বাজে মন্তব্য ছুড়ে দেয়। গাবতলী আন্ডারপাসেও একই অবস্থা। বিভিন্ন বাসের কর্মচারীরা বিশ্রামের জন্য বেছে নেয় এই জায়গা। দিনের বেলায়ও প্রায়ই ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এদিকে হকার আর মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে গুলিস্তান আন্ডারপাস। রাজধানীর তিনটি আন্ডারপাসের অবস্থায়ই শোচনীয়।  জানা যায়, রাজধানীতে সব মিলিয়ে ৫৭টি ফুট ওভারব্রিজ ও ৩টি আন্ডারপাস রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৪টি এবং সড়ক ও জনপথের ৩টি। ৪৫টি স্টিলের এবং অন্য ১২টি কংক্রিটের তৈরি। আন্ডারপাসগুলোর পাশাপাশি ফুটওভারব্রিজের অবস্থাও ভালো না। শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনের ফুটওভারব্রিজ পরিণত হয়েছে হকারদের স্থায়ী দোকানে। কসমেটিকস, জামা, জুতা, ফলের দোকান কী নেই সেখানে। বাংলামোটর পার হয়ে বিটিসিএলের সামনের ফুটওভার ব্রিজ প্রায়ই থাকে জনমানবহীন। সিঁড়ি থেকে শুরু করে ব্রিজের উপরে যেখানে সেখানে মলত্যাগ করে রাখে ছিন্নমূল মানুষ। নাকে রুমাল চেপে ডিঙ্গিয়ে যেতে হয় এ পথের যাত্রীদের। নতুনবাজার ফুটওভারব্রিজের দুপাশে ফুলের গাছ লাগিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু ব্রিজটির বেশ কিছু জায়গায় লোহা ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় আকারের গর্ত। দুই পাশের সংযোগস্থলের লোহা ক্ষয়ে গিয়ে জীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে ব্রিজটি। দুপাশে হকার এবং ফকিরদের টানাহেঁচড়া তো আছেই। এদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বসাতে কাউকে কিছু না জানিয়েই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কুড়িল বিশ্বরোডের আগে জোয়ারসাহারা এলাকার ফুটওভার ব্রিজ। ফলে দ্রুত গাড়ি চলাচলকারী দীর্ঘ এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন মানুষ। তার পাশেই ফ্লাইওভারের ওপরে তৈরি কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন হাতেগোনা মানুষ। একটু পেছন দিকে হওয়ায় ফুটওভার ব্রিজে না উঠে ২৪ ঘণ্টাই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে মানুষ। পর পর মর্মান্তিক কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করতে মাঠে নেমেছে দুই সিটি করপোরেশন। বেশ কিছু ফুটওভারব্রিজ পরিষ্কার করে মাইকিং কার্যক্রম চালালেও তেমন একটা কাজে আসছে না প্রচার কার্যক্রম। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিত না হওয়ায় দুদিন না যেতেই নোংরা হয়ে পড়ে এগুলো। এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গণি বলেছিলেন, আমরা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষকেও সচেতন হতে হবে। সকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরিষ্কার করে কিন্তু বেলা ১০টা বাজতেই দোকান খুলে রাস্তায় ময়লা ফেলা হয়। সচেতন করতে আমরা লিফলেট বিতরণ করছি, মাইকিং করছি।

সর্বশেষ খবর