শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলোর মুখ দেখছে বৃত্তাকার রেল

বাজেটে বরাদ্দ থাকছে আড়াই হাজার কোটি টাকা কাজ শুরু হতে পারে চলতি বছর

মানিক মুনতাসির

আলোর মুখ দেখছে বৃত্তাকার রেল

অসহনীয় যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকার চারদিকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এ জন্য বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী পেলে সরকার তা সানন্দে গ্রহণ করবে। এর জন্য অবশ্য উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্য আরও কয়েকটি সংস্থা ও দেশকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে সাড়া না পেলে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটির কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলতি বছরই প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে চায় রেল বিভাগ। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক সদস্যের প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জানান, যানজট নিরসনে ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য সমীক্ষা প্রস্তাব ২৭ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। বৃত্তাকার এই রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অনেক আগের। এমনকি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল মে ২০১৫ থেকে জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘদিন পর অবশেষে আগামী বাজেটে এর জন্য বরাদ্দও রাখা হচ্ছে। এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে চায় সরকার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু রাজধানী ঢাকার যানজট অনেক আগেই অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে, এমনকি ফ্লাইওভার করেও যানজট কমানো যাচ্ছে না, বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল সম্পন্ন হলে হয়তো যানজট কমে আসবে। এ ছাড়া সার্কুলার ট্রেন ছাড়তে পারলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। শুধু তা-ই নয়, ঢাকাসহ সারা দেশের রেলব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবনা ও সম্ভাব্যতা অনুযায়ী বৃত্তাকার এই রেলপথের স্টেশন থাকবে ২০টি। এর মধ্যে টঙ্গী থেকে শুরু হয়ে তুরাগ, আদাবর, আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জ, তারাব, হাজারীবাগ, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জ, চৌধুরীবাড়ী, চাষাঢ়া, ফতুল্লা, শ্যামপুর, সদরঘাট, বাবুবাজার, নবাবগঞ্জ, শঙ্কর, গাবতলী, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বিরুলিয়া, উত্তরা ইস্টার্ন বাইপাস রোড, পূর্বাঞ্চল হয়ে পুনরায় টঙ্গীতে সংযুক্ত হবে। বৃত্তাকার এই রেল নেটওয়ার্ক হবে উচ্চতর বিদ্যুৎ এবং ডাবল লাইন স্ট্যান্ডার্ড গেজসম্পন্ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেনগুলো উভয় পাশে ক্রমাগতভাবে চলবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীরা খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর