শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সেন্ট্রাল আফ্রিকার মাচায় বাংলাদেশের সবজি

শিমুল মাহমুদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকা থেকে

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংঘাতপূর্ণ দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের ছড়াছড়ি। এত প্রাকৃতিক সম্পদ মাটির ওপরে ও নিচে কিন্তু আহরণ করার কোনো উদ্যোগ নেই। বিশাল ভূখণ্ডের এই দেশে প্রতি বর্গমাইলে মাত্র ৭ জন লোকের বাস। জাতিগত সংঘাতের কারণে লোকজন প্রাণভয়ে শহর এলাকাতেই বসবাস করে। ফলে মাইলের পর মাইল এলাকায় কোনো মানুষের পদচিহ্ন নেই। সোনা,  হীরা, ইউরেনিয়াম, আইভরিসহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরও এই দেশের মাত্র অর্ধকোটি মানুষের খাবার জোটে না। তাদের অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে হয়। ফলে মাথাপিছু আয় মাত্র ৩৫৮ ডলার। রাজধানী বাঙ্গি থেকে ক্যামেরুন বর্ডার পর্যন্ত ৬১০ কিলোমিটারের একমাত্র সড়ক পথটির দুই পাশেই বেশির ভাগ মানুষের বসতি। একটি কিংবা সর্বোচ্চ দুটি ঘর নিয়ে তাদের বাড়ি। বাড়ির সামনে শুকনো এবং পোড়ানো কাঠ আঁটি বেঁধে রাখা বিক্রির জন্য। দেশটির একটি বড় অংশ ঘুরে মিডিয়া টিমের এক সদস্য বললেন, এই আফ্রিকানদের মধ্যে যে বেশি কর্মঠ, সে জঙ্গলে গিয়ে আগুন দিয়ে কাঠ পুড়িয়ে বাড়ির সামনে রাখে বিক্রি করতে। আর যে তার চেয়ে কম পরিশ্রমী সে সেই কাঠ কিনে নিয়ে যায় রান্নার কাজে। এ ছাড়া ভারী কোনো কাজ তাদের করতে হয় না। রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা তাদের বাজারগুলোতে বিচিত্র সব জিনিস পাওয়া যায়। গাছে গাছে পাখি ধরার ফাঁদ পাতা। সেই ফাঁদে ধরা পড়া পাখি আগুনে ঝলসে বিক্রি করে তারা। এ ছাড়া সাপ, বিচ্ছু, ইঁদুরসহ প্রায় সব ধরনের পোকামাকড় তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে। এরা সব ধরনের পশু, পাখি, জন্তু, পতঙ্গ খেয়ে ফেলে। বানরও এদের প্রিয় খাদ্য। রাজধানী থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে বোয়ারে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন ব্যানব্যাট-৪ দেশটির একটি বড় অংশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি তারা সেন্ট্রাল আফ্রিকার একমাত্র খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ক্যামেরুন থেকে বাঙ্গি পর্যন্ত মেইন সাপ্লাই রুট-এমএসআর সক্রিয় ও নির্বিঘ্ন রাখার দায়িত্ব পালন করছে। এসব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতে হয়। এর মধ্যে সিভিল মিলিটারি কো-অপারেশন- সিমিক অন্যতম। সিমিক কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে পারছে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা স্থানীয় জনগণের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করছে। তাদের শাকসবজি চাষাবাদ শেখাচ্ছে। বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। নিজেরাও ব্যাটালিয়নের এলাকার মধ্যে শাকসবজি চাষ করছে। এর মধ্য দিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কৃষি প্রযুক্তি স্থানান্তর হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের আবাসস্থল বোসাম্বেলে কোম্পানি অপারেটিং বেস (সিওবি)-এ এসেই দুপুরের খাবারে বাংলাদেশি সবজির দেখা মিলল। নিজেদের চাষ করা লাউ রান্না করা হয়েছে চিংড়ি দিয়ে।

ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেল, পরম যত্নে লাউ গাছ লাগিয়েছেন সেনাসদস্যরা। সঙ্গে আছে করলা, বেগুনসহ নানা সবজি। বোয়ার এলাকায় ব্যানব্যাট-৪ সদস্যরা অনেক জায়গা নিয়ে সবজি বাগান করেছেন। রাতের খাবারেও মিলল নিজেদের উৎপাদিত সবজির স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ। পাতে এলো সেই লাউ চিংড়ি ও ঢেঁড়স। বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের পাশে বিশাল সবজি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, লাউ, টমেটো, মিষ্টি কুমরা, মুলা, করলা, বেগুন, ঢেঁড়স, পেঁপে, কাঁচামরিচসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করা হচ্ছে। একটি প্লটে বিশাল আকারের তরমুজ ও খিরা দেখা গেল। পাশাপাশি লালশাক, পুঁইশাক, স্কোয়াশ, ধনেপাতা চাষ হচ্ছে। সেই সবজি খেতে কাজ করছে স্থানীয়রা। স্থানীয় আফ্রিকান ডিজিরে বলেন, ব্যানব্যাট-৪-এ আমি সবজি চাষ করা শিখেছি। বাড়িতেও আমি বাংলাদেশি শাকসবজি চাষ করেছি। আমার বউ এটা খুব পছন্দ করছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জানান, এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

সর্বশেষ খবর