শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজানে যানজট নিয়ে নগরবাসীর উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছর রমজান শুরু হলেই যানজটে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় যানজটে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে করছেন না নগরবাসী। তার ওপর রয়েছে বৃষ্টি-বাদল। যখন তখন বৃষ্টি নেমে নগরীতে সৃষ্টি হয় জলজট। তাতে যানজট আরও দুঃসহ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় আজ শুরু হওয়া রমজান মাস নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে আছেন নগরবাসী। ইফতারের আগে আগে বাড়ি ফিরতে পারবেন নাকি যানজটে আটকে পড়ে রাস্তায়ই ইফতার করতে হবে— এ নিয়ে নগরীর কর্মজীবীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন।

রমজানে রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থার উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তবে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিগত বছরগুলোয় দেখা গেছে, রমজান মাসে রাজধানীর রাস্তাঘাটে বিকাল ৩টার পর শুরু হয় ঘরমুখী মানুষের যাত্রা। বিকাল ৪টার পর বাড়তে থাকে যাত্রার চাপ। তখন নগরীর প্রতিটি সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এবারও সেই যানজট-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় দেখছেন না নগরবাসী। বিশেষ করে নগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়কে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। খামরবাড়ি মোড় থেকে রোকেয়া সরণি হয়ে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০ হয়ে একেবারে পল্লবী পর্যন্ত সড়কটির মাঝবরাবর দুই পাশের বেশকিছু জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে মেট্রোরেল স্থাপন চলছে। দুই পাশে লেন করে যানবাহন চলার ব্যবস্থা রাখলেও দিনের অধিকাংশ সময় এই সড়কে লেগে থাকে অত্যন্ত বিরক্তিকর দীর্ঘস্থায়ী যানজট। ফলে ফার্মগেট থেকে মিরপুর-পল্লবী অভিমুখী ও পল্লবী-মিরপুর থেকে ফার্মগেট-মতিঝিল অভিমুখী যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায়ই কাটাতে হচ্ছে। রমজানে এ সড়কে ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী নগরবাসী।

মেট্রোরেল ছাড়া নগরীর পুরানা পল্টন, কুড়িল থেকে নতুন বাজার হয়ে বাড্ডা-রামপুরা-আবুল হোটেল পর্যন্ত প্রধান সড়কটি বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নকাজের নামে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ফলে এসব সড়কেও দিনের বেশির ভাগ সময়ই যানজট লেগে থাকে। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রাপা প্লাজার সামনে থেকে সাত মসজিদ রোড পর্যন্ত সড়কটি পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসানোর জন্য কাটা হয়েছে কয়েক মাস আগে। পাইপ বসানো শেষ হলেও এখন পর্যন্ত রাস্তাটির এক পাশের প্রায় দেড় লেন জুড়ে অকেজো। সেখানে লোকজন গাড়ি পার্কিং করে রাখে। ফলে এ সড়কে দিনের বড় সময়ই যানজট। বিশেষ করে সকালে অফিস টাইমে এবং বিকাল ৩টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় যানজট লেগে থাকে। নগরীর আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এখন উন্নয়নকাজের খপ্পরে আছে। ফলে নগরবাসীকে এবারের রমজান মাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। নগরবাসী বলছেন, অন্তত রমজান উপলক্ষে যদি নগরীর যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি মিলিটারি পুলিশকে নামানো যায় তাহলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। তারা বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যানবাহন নিয়ম মেনে চলে; সেখানে কোনোরকম যানজট হয় না। অথচ ক্যান্টনমেন্টের বাইরে সেই একই গাড়ির চালকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাইভাবে চালিয়ে যানজট লাগিয়ে দেন।

এদিকে যানজটের আরেকটা প্রধান কারণ হচ্ছে, নগর পরিবহনের গাড়িগুলোর যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো। এটা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করা দরকার যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। অন্তত রমজানে যাতে চালকরা যত্রতত্র পার্কিং না করতে পারেন সেদিকেও মহানগর পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নগরবাসী।

মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, রমজান মাসে নতুন করে যাতে কোনো রাস্তা কাটা না হয় সেজন্য তারা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করেছেন। একই সঙ্গে যেসব রাস্তা ইতিপূর্বে কাটা হয়েছে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন করে রাস্তা কাটা হলে রমজান মাসে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তিনি জানান, ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, তিতাস, ডেসা, ডেসকোসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর