রবিবার, ২০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবারও আসছে চিকুনগুনিয়া

বাসাবাড়িতে মিলছে এডিস মশার লার্ভা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আবারও আসছে চিকুনগুনিয়া

ডেঙ্গুর পাশাপাশি গত বছর থেকে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক। এ দুই রোগের জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভা এ বছরও পাওয়া গেছে দুই সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বাসাবাড়িতে। সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম নিলেও বাসিন্দাদের অসচেতনতায় বাড়ির ভিতরে, আনাচে কানাচে বেড়ে উঠছে চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা।

সম্প্রতি ধানমন্ডি, কলাবাগান ও পরীবাগ এলাকার ১৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে ১১টিতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আরও কয়েকটি এলাকায়ও পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গায় এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এটা এলার্মিং। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে আমরা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমাদের ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে টিম কাজ করবে। কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি টিম ১০০ বাসাবাড়ি পরিদর্শন করবে। ৫ হাজার ৭০০টি বাসা থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং মশক নিধনের মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধের প্রস্তুতি নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে মশার বংশবিস্তার রোধ করা। এডিসের লার্ভা পেলে সেখানে ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িটি চিহ্নিত করে রাখা হবে।’ ওই বাড়িতে পুনরায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মেয়র। ৮ এপ্রিল থেকে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সহায়তায় ডিএসসিসির পাঁচটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। ডিএসসিসির অঞ্চল-১-এর মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কমিটি ধানমন্ডি, কলাবাগান, পরীবাগ ও এলিফ্যান্ট রোডের ১৮টি বাসা পরিদর্শন করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠায়; তাতেই এডিস মশা পাওয়ার এ চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮ এপ্রিল ধানমন্ডি এলাকার সাতটি বাড়ি পরিদর্শন করে কমিটি। এর মধ্যে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ২২ এপ্রিল কলাবাগানের ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করে চারটি বাড়িতে লার্ভা পায়। ৬ মে পরীবাগের পাঁচটি বাড়ি পরিদর্শন করে চারটিতেই লার্ভা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা যায়, এসব বাড়ির পানির ড্রাম, ফুলের টব, ঘরের আশপাশে পড়ে থাকা মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, পরিত্যক্ত কলসি, বালতি, বোতল, কনটেইনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা ও পুকুরে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা রয়েছে। লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে দুটি নির্মাণাধীন বাড়ির পানির চৌবাচ্চা, কংক্রিট মিকশ্চার মেশিনের ভিতরও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের ১০০টি জায়গায় জানুয়ারি মাসে জরিপ চালায়। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪১টি জায়গায় জরিপ হয়। জরিপ শেষে ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বনানী, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের একাংশ, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরা-৯ নম্বর সেক্টর। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডি-১, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও শান্তিনগর। রাজধানীতে এখন পর্যন্ত কোনো চিকুনগুনিয়ার রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপের বিষয় উল্লেখ করে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি। গত বছর মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই ঢাকার ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৭৯ জন। মারা যান ৮ জন। চলতি বছর গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহরজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। নগরবাসীর মনে ফিরিয়ে এনেছে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর আতঙ্ক। মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি বরাদ্দ বাড়ালেও মশার যন্ত্রণায় রাজধানীবাসী অতিষ্ঠ। গত অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ব্যয় করেছে ৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসসিসির বরাদ্দ ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর