রবিবার, ২০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

ভর্তুকির চেয়ে কৃষকের পণ্যে ন্যায্য দাম জরুরি

—আবদুল আউয়াল মিন্টু

রুহুল আমিন রাসেল

ভর্তুকির চেয়ে কৃষকের পণ্যে ন্যায্য দাম জরুরি

আসছে বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি না দিয়ে কৃষক উৎপাদিত শস্য বা পণ্যসামগ্রীর ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু।

কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতের এই উদ্যোক্তা মনে করেন, কৃষিকে সরকার সাহায্য করছে। 

কিন্তু সারের দাম কমালে কৃষকের বেশি লাভ হয় না। সেচে ভর্তুকির দরকার নেই। বরং ন্যায্য দাম পেলে কৃষকের কাজে লাগবে, এটাই বড় সাহায্য হবে।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক এই সভাপতি এখন মাল্টিমুড গ্রুপের চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানটির সোনারগাঁও রোড কার্যালয়ে গতকাল আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লোক দেখানোর জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভর্তুকি ব্যবহার করা হয়। অথচ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে নজর দেওয়া জরুরি। যদিও মাছ উৎপাদনে ভালো করছে বাংলাদেশ। কিন্তু মসলার উৎপাদন নেই, এটা আমদানি নির্ভর হয়ে গেছে। আবার কৃষিভিত্তিক পণ্য বহুমুখীকরণের বড় সমস্যা জমি কম হওয়ার কারণে। দেশে কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়তে সরকার প্রণোদনাও দিচ্ছে। ইচ্ছাও আছে। কিন্তু বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছে। এই দুটো দিকের পরিবর্তন না হলে— দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগ হবে না। আমরা যত লোকজনের কাছে পরিসংখ্যান দেখাই না কেন যে— আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে, এই কথা স্বল্প দিন লোকজনের কাছে ধরে রাখা যাবে, এক বছরও না। কারণ— বাংলাদেশের জনগণ যখন চাকরি পায় না, রপ্তানি স্তিমিত হয়ে আসছে, তখন এটা পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। খালি মুখে মুখে বললে তো বিনিয়োগ হবে না। আমার প্রশ্ন— গত কয়েক বছরে কয়টা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে? নতুন কয়টা বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগে এসেছে? আমার তো চোখে ধরা পড়ে না। দেশি কয়টা কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ করছে বা পুরনো ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে? কয়টি নতুন পণ্য সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে? আসলে বাস্তব পরিস্থিতি- এদেশে একটা বৈধ নির্বাচিত সরকার নেই।’

শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে করণীয় প্রসঙ্গে নাবিক থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘যে কোনো দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য দক্ষ মানবসম্পদ হলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর উৎপাদনশীলতা যতই বাড়বে, ততই দেশের সম্পদ বাড়বে। তাতে বাড়বে মানুষের আয়-উন্নতি। এই উৎপাদনশীলতার সঙ্গেই অনেক মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন সম্পর্কিত। এখন দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দুটোই জরুরি। সবাই শিক্ষা নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু প্রশিক্ষণ নিয়ে কোনো কথা বলেন না। অথচ প্রশিক্ষণ ধারাবাহিক ইস্যু।’ এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমরা সব সময় চাইব বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াও। পড়াশোনার সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করছে। কিন্তু মান ও গুণগত মানের উন্নয়ন হচ্ছে কি? যদিও বাংলাদেশের খুব কম মেয়ে আছে, যারা লেখাপড়া করে না। এটাও একটা গুণগত মান উন্নয়ন। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক মারামারি ছাড়া গুণগত মান কোথায় হয়েছে? আমার প্রশ্ন এ দেশে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ছে? শিক্ষা বা পুলিশের মান উন্নয়ন হয়েছে? বিদ্যুৎ সরবরাহের মান উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের কোনো খাতেই প্রত্যাশিত মান উন্নয়ন হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘বিগত ৫ বছরে কোনো সময়েই বাজেট ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হয়নি। সংসদে যখন বাজেট পাস হয়, তখন তা একটা আইনে পরিণত হয়। এই আইন বাস্তবায়নের জবাবদিহিতা তো দেখিনি। কিন্তু আইন করে তা ভঙ্গ করা হয়। তবুও জবাবদিহিতা নেই। বাজেট নিয়ে সরকারগুলো ধোঁকাবাজি দিয়েছে, জনগণও ত্যক্ত—বিরক্ত হয়েছে। তাই বাজেট নিয়ে জনগণ চিন্তিত নয়। আমি মনে করি, যা বাস্তবায়ন করা হবে, তাই বাজেটে থাকা উচিত। এটা গত কয়েক বছরে আমরা পাইনি।’ এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতার মতে, দেশে উন্নয়ন খাতের বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। কিন্তু অনুন্নয়ন খাতের বাজেটে যা বরাদ্দ রাখা হয়, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। কিন্তু ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে— মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ন্যূনতম ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ দরকার। আমরা এখনো ৩০ থেকে ৩২ শতাংশে পড়ে আছি। বাজেটে উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বেশি হলে, ভবিষ্যতে বাজেট আরও বড় করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে আকার বাজেট হয়, তা বেশি বড় নয়। জিডিপির ১২ থেকে ১৩ শতাংশ বাজেট হয়, এটা আরও বড় হতে পারে।’ তার মতে, ‘ঋণ করে বাজেট বাস্তবায়ন না করে ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত। এটা ঠিক নয়। বলা হচ্ছে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এটা হলে মানুষের চাকরি হচ্ছে না কেন? সত্যিকারের প্রবৃদ্ধি হলে বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন? কোনো কিছুর হিসাব মিলছে না। এবার নির্বাচনের বছরে সরকার বেশি টাকা খরচের বাজেট করবে।’ আবদুল আউয়াল মিন্টুু করপোরেট করহার কমানোর উদ্যোগকে ভালো উল্লেখ করে বলেন, ‘করপোরেট কর কমানো হলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিভিন্ন দেশেও এটা করে। কারণ— লাভের অংশ ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। পাশাপাশি ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে।’ অর্থ পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা টাকা পাচার করবে, তারা করবেই। নিজ দেশে যখন কেউ নিরাপদ বোধ করবে, তখনই অর্থ পাচার হবে না। দেশের মৌলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও নিজের নিরাপত্তা না থাকলে অর্থ পাচার বাড়বে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতে হবে। আইনের ওপর নিজের ভরসা না থাকলে পাচার হবে।’

সর্বশেষ খবর