মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভিন্ন রূপে চকবাজারের ইফতার বাজার

মাহবুব মমতাজী

ভিন্ন রূপে চকবাজারের ইফতার বাজার

পুরান ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রীর সুনাম দেশজুড়ে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও এর কদর রয়েছে। ভরা ফলের মৌসুমে এবার ভাজাপোড়ার চেয়ে ভোজন রসিকদের নজর পড়েছে ভিন্ন দিকে। মসলাযুক্ত তৈলাক্ত খাবারের বিপরীতে ফল-ফলাদির প্রতি ঝুঁকছেন বেশি। গতকাল চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনে আনারস, পেপে, কলা, বাঙ্গি, তরমুজ, বেল ও তালের শাসের পসরা সাজানো দেখা যায় বেশি। বরাবরের চেয়ে একটু ভিন্ন রূপ নিয়েছে চকবাজারের এই ইফতার বাজার। এখানে কথা হয় তপন নামে এক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি রোস্ট ও কিমা পরোটা বিক্রি করেন। তিনি জানালেন, এখন ফলের মৌসুম। তাই মসলাপাতির তৈরি ভাজাপোড়া খাবার একটু কম বিক্রি হচ্ছে। তুলনামুলক তরল ও রসালো ফলের দিকে ক্রেতাদের বেশি চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পবিত্র রমজানে গোটা রাজধানী ইফতার বাজারে পরিণত হলেও চকবাজারে রোজাদারদের ভিড় থাকে একটু বেশি। গত রমজানের তুলনায় এবারও প্রতি ইফতার সামগ্রীতে দাম বেড়েছে গড়ে ৫০ টাকা করে। ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোংগা ভইরা লইয়া যায়’ এই ইফতার সামগ্রী ছাড়া যেন চকবাজারের ইফতারের বাজার কমেই না। একইসঙ্গে শাহী জিলাপির জন্যও চকবাজারে আলাদা খ্যাতি রয়েছে। মাসকলাই, বেশম, পোলাওর চাল, ময়দা ও ডালডার তৈরি এই শাহী জিলাপির রেওয়াজ শুরু মুঘল আমল থেকে। বেশ সুস্বাদু এই খাবারটি ভোজন রসিকদের কাছে বেশ প্রিয়। এবার শাহী জিলাপি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পেপে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি, তরমুজ ৬০-১৬০ টাকা, বেল প্রতি হালি ১৪০-২৬০ টাকা, তালের শাস প্রতি পিস ৪০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ৬০ টাকা এবং সাগর কলা ডজন ১৮০ টাকা। বেলা ১টার পরপরই চকের শাহী মসজিদের সামনের অংশে উর্দু রোর্ডের দুপাশে বসে হরেক রকমের নবাবী ইফতার সামগ্রীর দোকান। জানা যায়, ‘বড়বাপের পোলায় খায়’ খাবারটি মোট ৩৬ আইটেম ও ১৮টি মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। গরুর মগজ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডিম, আলু, ঘি, বুটের ডালসহ নানা ধরনের মসলার মিশ্রণে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজির দাম ৪০০ টাকা। চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার মাঝখানে সারি সারি প্রায় দুই শতাধিক দোকান দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে তিনভাগই ফল-ফলাদির দোকান। সাজানো ভাজাপোড়া ইফতারির পসরা মধ্যে রয়েছে- সুতি কাবাব, জালি কাবাব, শাকপুলি, টিকা কাবাব, আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মুসল্লাম, বটিকাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, ডিম চপ, কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাও, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, খাসির রানের রোস্ট, দইবড়া, মোল্লার হালিম, নুরানি লাচ্ছি, শাহী জিলাপি, লুচি, কিমা পরটা, কাশ্মিরী চিকেন, পেস্তার শরবত ও পনির ইত্যাদি।

এসবের মধ্যে খাসির মাংসের কাবাব প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট ৫০০ টাকা, গরুর মাংসের কাবাবের কেজি ৬০০ টাকা, মুরগির রোস্ট ২৫০ টাকা, কয়েলের রোস্ট ৬০ টাকা, কিমা পরোটা ৬০ টাকা, লুচি ৫০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১৩০ টাকা, বটিকাবাব ও কাশ্মিরী চিকেন প্রতিকেজি ১০০০ টাকা, চিকন জিলাপি কেজি ১২০ টাকা, দইবড়া প্রতিকেজি ২০০ টাকা, চিকেন স্টিক পিস ৭০ থেকে ৯০ টাকা, জালি কাবাব প্রতিপিস ৪০ টাকা, বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৭০ টাকা, হালিম (বাটির আকারভেদে) ৬০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, সমুচা ১০ টাকা, পিয়াজু ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, বেগুনি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। চিকেন পরোটার দাম ৫০ টাকা, চিকেন পিঠা ১৫ টাকা। সুতি কাবাব প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, গরুর টিক্কা কাবাব ৬০টাকা, মুরগির সাসলিক ৪০ টাকা, গরুর কাঠি কাবাব ৫০ টাকা।  জানা যায়, চকবাজারের ইফতারির ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। এই উৎসবের শুরু মুঘল আমল থেকে। মুঘল আমলে শাহী মসজিদের সামনে একটি কূপ ছিল। তার চারপাশে চেয়ার টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করা হতো হরেক রকম নবাবী ইফতারি। সেই কূপ এখন আর নেই। তবে আগের মতোই মসজিদের সামনে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করা হয় ইফতারি। ১৭০২ সালে ঢাকার দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খান চকবাজারকে আধুনিক বাজারে পরিণত করেন। এরপর গড়ে ওঠে নানা রকম মুখরোচক খাবারের দোকান। বর্তমানে দেশজুড়ে রয়েছে এই ইফতারির সুনাম।

সর্বশেষ খবর