শিরোনাম
রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
কী হচ্ছে দুই যুব সংগঠনে

যুবদলে সুপার ফাইভেই দেড় বছর

মাহমুদ আজহার

যুবদলে সুপার ফাইভেই দেড় বছর

প্রায় দেড় বছর ধরে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়ে চলছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সুপার ফাইভের কমিটি দেওয়ার সময় বিএনপির হাইকমান্ড এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু দেড় বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। বছরজুড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিনে শোডাউনেই এ দীর্ঘ সময় পার করেছেন এই সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

জানা যায়, সারা দেশে ৮৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মাত্র ১৩টির আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে। দেড় বছরে অর্জন বলতে এটুকুই। রাজধানীতে মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের আংশিক কমিটি হলেও থানা-ওয়ার্ডে হাত দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়ায় সংগঠনটি জেলা কমিটি করতে ‘মরিয়া’ হয়ে উঠছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া  সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বদরুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় মামুন হাসানকে। এই আংশিক কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য পেশ করবে।

সূত্র জানায়, যুবদলের শীর্ষ পাঁচ নেতাই বিভিন্ন মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। নেতা-কর্মীদের আড়ালেই থাকেন তারা। এর মধ্যে সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু শতাধিক মামলার আসামি। তারা প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিতেও আসতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও যেতে পারেননি তারা। পাঁচ নেতাই আত্মগোপনে থাকায় যুবদলের মাঠ পর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঢাকার বাইরে সারা দেশেও যুবদল নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার দিনসহ তার মুক্তি দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচিতে যুবদলের শীর্ষ নেতাদের দেখা গেছে।

যুবদলের শীর্ষ নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা হস্তান্তর করা হয়। তিনি কমিটি ঘোষণা দেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করার পর তাকে কারাগারে যেতে হয়। এরপর আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ভাবছে না যুবদল। এখন বিএনপির হাইকমান্ড জেলা ও মহানগর কমিটিগুলো করারই তাগিদ দিচ্ছে। বেগম জিয়ার মুক্তির পরই কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে পারে বলে জানান তারা। জানা যায়, বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটির পরিধি অনেক বড় হলেও যুবদল বিগত কমিটির মতো এবারও ২৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবে।

এ প্রসঙ্গে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও যুবদলের নিজস্ব কর্মসূচি ছাড়া বিএনপির সব কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এখন জেলা কমিটির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। ঢাকা মহানগরের থানা কমিটিও দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে রমজানের মধ্যে প্রায় অর্ধশত জেলা কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

তবে যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশী মাহবুবুল হাসান পিংকু বলেন, যুবদলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই কেন্দ্রীয়সহ সব সাংগঠনিক জেলা কমিটি দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও হতাশা কাজ করছে। সামনে নির্বাচন ও আন্দোলনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করাও জরুরি।

যুবদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ সময়ই তালাবদ্ধ থাকে কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয়। নেতা-কর্মীদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। মাঝে-মধ্যে দু-চারজনকে দেখা গেলেও দ্রুতই কার্যালয় ছাড়েন তারা। অবশ্য তাদের বক্তব্য হলো, কার্যালয়ের সামনে থেকে নিয়মিতই পুলিশ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে। তাই শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার এড়াতে কার্যালয়মুখী হন না। এমনকি মহানগরের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও কার্যালয়মুখী হতে ভয় পাচ্ছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মাদকবিরোধী অভিযানে ক্রসফায়ারকে ঘিরেও মাঠ পর্যায়ে যুবদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ জন্য ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন।

এ প্রসঙ্গে এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা প্রথমদিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়ার পর আর কার্যালয়মুখী হতে পারছি না। সেখান থেকে নিয়মিতই নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কৌশলগত কারণেই আমরা গ্রেফতার এড়িয়ে চলছি।

সর্বশেষ খবর