সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

অদম্য সাহসিকতায় এগিয়ে চলছে শান্তিরক্ষীরা

শিমুল মাহমুদ, মালি থেকে ফিরে

অদম্য সাহসিকতায় এগিয়ে চলছে শান্তিরক্ষীরা

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গত ৩০ বছরে অনেক ত্যাগ ও অর্জন রয়েছে বাংলাদেশের। রয়েছে পুলিশ এবং তিন বাহিনীর ১৪২ জন সদস্যের আত্মত্যাগ। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বগুলো বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পালন করতে হয়। অন্য দেশের শান্তিরক্ষীরা যেসব জটিলতাপূর্ণ কাজগুলো এড়িয়ে যায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সেসব দায়িত্বই পালন করে অদম্য সাহসিকতায়। কিন্তু অর্জনের ফসল কার্যকরভাবে ঘরে তুলতে পারে না বাংলাদেশ। কূটনৈতিক ব্যর্থতায় জাতিসংঘের সদর দফতরসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশি কর্মকর্তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এ জন্য সরকারিভাবে যথাযথ তৎপরতা চালাতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দুটি শান্তিরক্ষা মিশন মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের একটিমাত্র সড়ক পথ দিয়ে সারা দেশের মানুষের খাদ্যসহ যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় আনা হয় ক্যামেরুন থেকে। এটিকে বলা হয় মেইন সাপ্লাই রুট (এমএসআর)। সপ্তাহে ছয় দিন বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্সের (ব্যানএসএফ) সদস্যরা পাহারা দিয়ে এই রুটে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর যাতায়াত নিশ্চিত করে। কিন্তু সংঘাতপূর্ণ এই দেশটিতে প্রায়ই হামলার শিকার হন সাধারণ মানুষসহ শান্তিরক্ষীরা। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ বাংলাদেশের কাছে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেনা সদস্যদের নিয়ে গঠিত দুটি ‘স্পেশাল ফোর্স’ পাঠানোর অনুরোধ জানায়। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ সদস্যদের নিয়ে একটি ‘স্পেশাল ফোর্স’ গঠন করে সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা দেশটির ৬১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটটির সরবরাহ লাইনের দায়িত্বটি এককভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে। একইভাবে দেশটির বোয়াকে প্রদেশে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের (ব্যানব্যাট) সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪০ শতাংশের মতো এলাকা পাহারা দিচ্ছেন। বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।  

মালির রাজধানী বামাকোতে বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট (ব্যানট্রান্সপোর্ট-৪) এবং গাও প্রদেশে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের (ব্যানব্যাট-৪) সদস্যরা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা মোকাবিলা করেই দায়িত্ব পালন করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এই দুটি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের দায়িত্বশীলতা ও পেশাগত অর্জন জাতিসংঘ আন্তরিকভাবে স্বীকার করে। কিন্তু গত ৩০ বছরের ত্যাগ ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ যতটা অর্জনের দাবিদার ততটা প্রাপ্তি ঘটেনি বলে মনে করা হচ্ছে।  

সেন্ট্রাল আফ্রিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কান্ট্রি সিনিয়র কর্নেল খন্দকার আলী রেজা বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ মিশনের অভিভাবক হিসেবে আমি যাদের নিয়ে এসেছি তাদের সবাইকে অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই আমার গ্রেট এচিভমেন্ট বলে মনে করব। তিনি বলেন, এখানে একটি ছোট্ট ঘটনা স্ফুলিঙ্গের মতো স্পার্ক করে। এ জন্য খুব টেনশনে থাকি।

শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের পরও পলিসি লেভেলে সম্পৃক্ততা কম কেন জানতে চাইলে কর্নেল খন্দকার আলী রেজা বলেন, এ সম্পর্কে আমার পক্ষে মন্তব্য করা কঠিন। কারণ, এই লেভেলে আমি কাজ করি না। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জাতিসংঘ সদর দফতরে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে। সেখানে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার সুযোগ আছে। অন্য দেশগুলো আমাদের মতোই কাজ করছে। কিন্তু কূটনীতিতে তারা এগিয়ে আছে। তাদের সেই ডিপ্লোমেসির কিছু ফলাফল, নেগেটিভ ফলাফল আমাদের কাছেও চলে আসে, আমাদের গ্রাউন্ড লেভেলে। যেমন— এখানে এই ফোর্স হেডকোয়ার্টারে আমাদের মিলিটারি স্টাফ অফিসার আরও বেশি হতো পারত। যদি ডিপ্লোম্যাসিটা আরও জোরদার করা যেত। এটা যদি বাড়ানো যায়, তাহলে অনেক ভালো হয়। তিনি বলেন, পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা উপলব্ধি করছি, শুধু ইংরেজি শেখাটাই এখন যথেষ্ট নয়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেকে বিক্রি করতে চাইলে আরও তৃতীয় ও চতুর্থ ভাষা জানতে হবে।

সর্বশেষ খবর