বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুখর তাঁতপল্লী

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

মুখর তাঁতপল্লী

ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলো। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা পাওয়ারলুম-হস্তচালিত তাঁতে নিখুঁতভাবে তৈরি করছেন জামদানি, সুতি কাতান, সুতি জামদানি, সিল্ক শাড়ি, সেট, বেনারসি, শেড শাড়ি, থ্রি-পিস ও হরেকরকমের লুঙ্গি ও গামছা। আবার কাপড়ের ওপর প্রিন্ট ও রংতুলির আঁচড়ে এবং হাতে করছেন নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নকশা। সিরাজগঞ্জের তৈরি শাড়ি-লুঙ্গি-গামছা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে প্রতিনিয়তই রং-সুতাসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও কাপড়ের দাম প্রায় একই থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁতিরা। সরেজমিন জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, কাজিপুর ও উল্লাপাড়ার তাঁত কারখানাগুলো খটখট শব্দে মুখরিত। ঈদ ঘিরে বাড়তি আয়ের আশায় তাঁত কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। তাঁতপল্লীগুলোয় নারী-পুরুষের কেউ নাটাই ঘুড়িয়ে সুতা কাটছেন, কেউ নলিতে সুতা কাটছেন, কেউ কাপড় ছেঁটে গুছিয়ে রাখছেন। সব মিলিয়ে শ্রমিকদের যেন দম ফেলানোর ফুসরত নেই। বিশেষ করে এ অঞ্চলের তাঁত কারখানা ঘিরে স্ট্যান্ডার্ড, আমানত শাহ, পাকিজা, ফাইভ স্টার, অনুসন্ধান, বসুন্ধরা, ফজর আলী, বৈঠক, বোখারি, মেমোরি, বাবা, আড়ংসহ দেশের বড় বড় কোম্পানি এখানে শোরুম খুলেছে। কোম্পানিগুলো অফ সিজনে তাদের দেওয়া ডিজাইনে তাঁতিদের কাছ থেকে হাজার হাজার পিস শাড়ি-লুঙ্গি কিনে মজুদ করে রাখেন। পরে সিজনের সময় নিজেদের লেভেল লাগিয়ে দ্বিগুণ দামে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি সৌদি আরব, দুবাই, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন। এ ছাড়া তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত তাঁতপণ্য এনায়েতপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট কাপড়ের হাটেও বিক্রি করছেন। এসব হাট থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাঁতিদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই রং-সুতাসহ তাঁতের উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে তুলনায় কাপড়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি ও রং-সুতার দাম, ব্যাংক লোন পরিশোধের জন্য অল্প দামেই তাদের কাপড় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় তাঁতশিল্পকে রক্ষায় রং-সুতার দাম নির্ধারণসহ স্বল্পসুদে ঋণের দাবি তাঁতিদের।

তাঁতশ্রমিক হায়দার, নুরুল ইসলাম, মাজেদা খাতুন জানান, ‘আমাদের শ্রমিকদের কোনো বোনাস নেই। কাজ করলে টাকা পাব না করলে পাব না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ ভালোভাবে কাটানোর জন্য একটু বেশি কাজ করছি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।’ তাঁতমালিক আরমান, কানন রহমান ও আলমাছ জানান, ‘বাঙালি নারীদের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের রুচিসম্মত শাড়ি তৈরী করা হচ্ছে। উৎপাদিত শাড়ি ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি হলেও রং-সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সমন্বয় না হওয়ায় তাঁতিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া নারীরা থ্রি-পিসের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাওয়ায় এবং অবৈধ পথে ভারত থেকে কম দামি শাড়ি আসার কারণে বাজারে তাঁতের শাড়ির চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর