বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইভিএম নিয়ে বিলাসী আয়োজন কেন্দ্রপ্রতি ব্যয় তিন লাখ টাকা

গোলাম রাব্বানী

ইভিএম নিয়ে বিলাসী আয়োজন কেন্দ্রপ্রতি ব্যয় তিন লাখ টাকা

নির্বাচন কমিশন-ইসির ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ভোটে ইভিএম ব্যবহারের নামে বিলাসী আয়োজন হচ্ছে বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এক-দুই কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের জন্য ইসির যুগ্ম সচিবসহ অন্যান্য পর্যায়ের প্রায় দুই ডজন কর্মকর্তা পাঠানো হয়। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও আইসিটি অনুবিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ভোটের অন্তত এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনী এলাকায় চলে যান। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও ছুটেন ভোটের আগের দিন। সব মিলিয়ে ব্যয়বহুল এ প্রযুক্তিকে নিয়ে ভোট পরিচালনায় বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের নামেও চলছে অর্থ ব্যয় যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। 

ইসির সূত্র জানিয়েছে, রংপুরে একটি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও খুলনার দুটি কেন্দ্রে ৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় হয় ইভিএম ব্যবহারে। গড়ে প্রতি কেন্দ্রে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে ইভিএম সেটসহ আনুষঙ্গিক মালামাল পরিবহন, টিমের কর্মকর্তা-

কর্মচারীদের সম্মানীভাতা, গাড়ি ভাড়া, ডেকোরেটর সামগ্রী ভাড়া, স্ক্রিনসহ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর-শব্দযন্ত্র ভাড়া, মাইকিং, প্রদর্শনীর জন্য কাস্টমাইজড মেশিন পরিবহন, অপ্রত্যাশিত ব্যয় ও ভোটের দিন কেন্দ্রে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের সম্মানীতে ব্যয় হচ্ছে এ অর্থ। সেইসঙ্গে ইসির বড় বড় কর্মকর্তাদের ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সফরসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম দিয়ে ভোট নেওয়ার আগে বড় কর্মযজ্ঞে নামতে হয় ইসিকে। সেক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরিতে ব্যাপক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন ইভিএম শুরুর প্রাক্কালে এনআইডি উইং মহাপরিচালক রংপুর ভোটের দিন উপস্থিত ছিলেন। গেল ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ও ১৫ মে খুলনা সিটি ভোটে দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়। জানা গেছে, ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মাহফুজা আক্তার কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটের আগে ৯ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুকূলে ৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। এর আগে ৫ এপ্রিল ইভিএম সেটসহ আনুষঙ্গিক মালামাল পরিবহনে ব্যয়ের জন্য ৫ কর্মকর্তার অনুকূলে ৭৩ হাজার টাকা মঞ্জুরি দেওয়া হয়। রংপুর সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ ডিসেম্বর ইভিএমে ভোট পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭০০ টাকা। ইভিএম পরিচিতি ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয় বরাদ্দ বাবদ ভোটের পরে ৪ জানুয়ারি মঞ্জুরি দেওয়া হয় আরও ৩৮ হাজার টাকা।

ইভিএমের মাস্টার ট্রেইনারদের চলছে প্রশিক্ষণ : ইসির নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) চলছে ইভিএম সংক্রান্ত ‘মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ’। গতকাল তৃতীয় ব্যাচে এ প্রশিক্ষণে কর্মকর্তাদের ডাকা হয়। মাঠ কর্মকর্তাদেরও ইভিএম নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করতে যাচ্ছে ইসি। প্রথম পর্যায়ে আজ ৬ জুন বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলের সব কর্মকর্তার সমন্বয়ে বরিশালে এক কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা আজ দুই দিনব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এতে ইভিএম নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনা, টেকনিক্যাল উপস্থাপনা, গণমাধ্যম ও জনপ্রতিনিধিদের ইভিএমে ভোট প্রদান পদ্ধতি প্রদর্শন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং দুটি স্পটে প্রদর্শনীর মাধ্যমে জনসচেতনার কর্মসূচি রয়েছে। এনআইডি মহাপরিচালক ছাড়াও অন্তত ১৮ জনের সমন্বয় টিম, প্রশিক্ষক টিম ও ডেমোনেস্ট্রেশন টিম থাকবে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে।

গাজীপুরে ৬ কেন্দ্রে ইভিএমের প্রস্তাব : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব না হলেও স্থানীয় নির্বাচনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। রংপুর ও খুলনার পর গাজীপুরে ৬টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর