বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ওয়াকওয়েতে বন্ধ হবে খাল দখল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ওয়াকওয়েতে বন্ধ হবে খাল দখল

দখল দূষণে বিপন্ন খাল — বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘খালের শহর হিসেবে বিশ্বে পরিচিত আমস্টারডাম। শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা খালের চারপাশে ওয়াকওয়ে, গ্রিনজোন ও রাস্তা তৈরি করে দখল-দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে খালগুলো। খালের পাশেই রাস্তায় চলছে গাড়ি, পরিবেশবান্ধব বোটে যাতায়াত করছে মানুষ। অথচ আমরা গলা টিপে হত্যা করছি ঢাকা শহরের আশীর্বাদ খালগুলো।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক পানি বিশেষজ্ঞ মুজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, খালকে কীভাবে বাঁচাতে হয় তার উদাহরণ এখন হাতিরঝিল। খালের চারপাশে ওয়াকওয়ে, গ্রিনজোন ও রাস্তা নির্মাণ করে ঢাকা শহরের অর্ধমৃত খালগুলো এখনো বাঁচানো সম্ভব। ঢাকা     জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মোট ৪৩টি খালের মালিকানায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ২৬টির দায়িত্ব নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা, ৯টি ব্যবহূত হচ্ছে বক্স কালভার্ট হিসেবে আর জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে বাকি ৮টি খাল। কাগজে-কলমে ৪৩টি খালের হিসাব থাকলেও দখল-দূষণে হারিয়ে গেছে অনেক খাল। মৃতের খাতায় নাম উঠেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধোলাইখালের। জানা যায়, ডেমরা ও গেন্ডারিয়া মিল ব্যারাক দিয়ে ধোলাইখালে নৌযান যাতায়াত করত। এই খালের সাহায্যে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, জনসন রোড, তাঁতীবাজার, নারিন্দা, গোয়ালনগর, বংশাল, তেজগাঁও, শাহবাগ, কারওয়ান বাজারসহ নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকায় নৌ যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। ইতিহাসবেত্তাদের মতে, নগরীর পানি নিষ্কাশনের সহজতর পথ তৈরি করাও ছিল ধোলাইখাল কাটার উদ্দেশ্য। কিন্তু দখলদারদের থাবায় হারিয়ে গেছে সেই খাল। গত বছর ঢাকার খাল দখলদারদের ২০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। গত বছর ১৮ জানুয়ারি খাল দখলমুক্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত দখলদারদের একটি তালিকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি খাল উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলোতে এখনো দখল নিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদাররা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকার মধ্যে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ এলাকায় তিনটি, খিলগাঁওয়ে একটি এবং নন্দীপাড়া খালটি উদ্ধার করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যে যেভাবে পেরেছে দখল করেছে। এ তালিকায় রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, পাড়া-মহল্লার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি সংস্থা ও কর্মকর্তারাও রয়েছেন। অনেক জায়গায় খাল দখলের পর তার ওপর স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারের প্রসঙ্গ তুললেই কর্তৃপক্ষ বারবার খাল দখলমুক্ত করার আশ্বাস দেয়। আর বছরের পর বছর ধরে এ কাজের জন্য এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দায় চাপায়। মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। তারা সরু নালাকে আরও বড় পরিসরে কেটে খাল তৈরি করে আর খালকে নদীর মতো বাঁচিয়ে রাখে। ড্রেজার দিয়ে নিয়মিত খাল খনন করে এবং পাম্পিং করে পানি পরিবর্তন করে নদীতে দেয়। ওই চিন্তা থেকেই হাতিরঝিলকে পরিকল্পনা করেছি আমরা। চারপাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যাবে, সবুজ এলাকা তৈরি হবে, খাল দিয়ে নৌ যোগাযোগ বাড়বে আর দখলদারদের আওতামুক্ত থাকবে খাল। কিন্তু এসব বলে কী লাভ! দখলদারদের এত দৌরাত্ম্য যে, সরকারও কিছু করতে পারে না।’

সর্বশেষ খবর