বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

কমলাপুরে টিকিটের জন্য হাহাকার

বিক্রি শুরু বিআরটিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদের টিকিটের জন্য হাজারো মানুষের হাহাকার চলছে। গতকাল ঈদযাত্রায় আগাম বিক্রির পঞ্চম দিনে স্টেশনের ২৬টি কাউন্টারে একযোগে ১৪ জুনের টিকিট বিক্রি করা হয়। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে ছিল হাজার হাজার টিকিটপ্রত্যাশীর ভিড়। গত ১০ বছরে ঈদের টিকিটের জন্য এত ভিড় কখনো হয়নি বলে জানিয়েছে কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির অব্যবস্থাপনা আর দালালের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ করে ফিরে গেছেন অসংখ্য সাধারণ যাত্রী। সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় স্টেশনে বসানো হয় র‌্যাব-৩ এর অস্থায়ী ক্যাম্প। পাশাপাশি রেলওয়ে থানা পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তাকর্মীরাও ক্যাম্প বসিয়ে কাজ করছেন। মানুষের ঢল সামলাতে প্লাটফর্মে প্রবেশ ও বের হতে রাখা হয় একাধিক বিকল্প পথ। তারপরও বিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন কাউন্টারে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বিআরটিসি বাসের ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি। সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হয় ১৪ ও ১৫ জুনের বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই টিকিট বিক্রি হয় বলে জানায় কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। তবে রাজধানীর কমলাপুর, কল্যাণপুর, মিরপুরের পরিবহন সংস্থার ডিপোগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম লক্ষ্য করা গেছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯০৪টি বাস চলাচল করবে বলে জানায় বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে ৪৭৫টি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে। আর ঢাকার ভিতর চলাচল করবে ৩৭৫টি বাস। এ ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য রাখা হবে ৫৪টি বাস। কমলাপুর স্টেশন ঘুরে জানা গেছে, ১৪ জুনের টিকিটের জন্য গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে স্টেশন চত্বরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি কমলাপুর স্টেশনের বাইরের রাস্তা পর্যন্ত চলে যায়। প্রতিটি সারিতে চাপাচাপি করে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন সবাই। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারীরা। তাদের একাধিক লাইন থাকলেও টিকিট দেওয়া হয় মাত্র দুটি কাউন্টার থেকে। স্বজনদের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন উদ্দেশ্যে ঘরমুখো যাত্রীদের প্রতীক্ষা ট্রেনের টিকিটের জন্য। বেশির ভাগ প্রত্যাশীকে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৪-৩০ ঘণ্টা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর টিকিট হাতে পেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। কাউন্টার থেকে টিকিট হাতে ফেরা যাত্রীদের ক্লান্তির ছাপ নিমিষেই উধাও। যেন ঝলমলে আলো ছড়াতে থাকে চোখে-মুখে। সজিব নামে একজন টিকিটপ্রত্যাশী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘প্রায় ২৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দুটি টিকিট পেয়েছি। প্রত্যাশিত টিকিট পেয়ে আসলেই আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে রাত জাগার কষ্ট বৃথা যায়নি।’ তবে টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়াদের সংখ্যা ছিল বেশি। সাব্বির নামে এমন একজন জানান, তিনি রাত পৌনে ১টা থেকে ১৫ নম্বর কাউন্টারের সামনের সারিতে নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাউন্টারের কাছে গিয়ে জানতে পারেন টিকিট শেষ। ১৬ নম্বর কাউন্টারের সামনের সারিতে থাকা সোহেল নামে একজন জানান, তিনি খুলনা যাওয়ার জন্য চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন সোমবার সন্ধ্যা থেকে। মাঝে স্টেশনের ভিতরে খবরের কাগজ বিছিয়ে কয়েকজন টিকিটপ্রত্যাশীর সঙ্গে তাস খেলে সময় পার করেছেন।

পলাশ নামে রেলওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্য জানান, সোমবার বিকাল থেকেই ১৪ তারিখের আগাম টিকিটের জন্য সবাই লাইনে দাঁড়ানো শুরু করে। সকালে সারির সামনের দিকের সবার চোখে-মুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। তবুও তারা উচ্ছ্বাস নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন।  কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, কমলাপুর থেকে আগাম টিকিট বিক্রির বরাদ্দ রয়েছে ২৭ হাজার ৪৬১টি। ১৪ জুনের জন্য রেকর্ড সংখ্যক মানুষ টিকিটের আশায় লাইনে দাঁড়ান। অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ টিকিটের জন্য এসেছেন। সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে কাউন্টারে যতক্ষণ টিকিট থাকবে ততক্ষণ বিক্রি চলবে।  ঈদ উপলক্ষে ১ জুন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। বিক্রির প্রথম দিন দেওয়া হয় ১০ জুনের টিকিট। এরপর যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩ জুনের টিকিট দেওয়া হয়। তিন দিন বিরতি দিয়ে ১০ জুন শুরু হবে ফিরতি টিকিট। চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর