বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

অস্তিত্ব সংকটে মেছো বাঘ

মোস্তফা কাজল

অস্তিত্ব সংকটে মেছো বাঘ

চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে বাংলার মেছো বাঘ বা ‘মেছো বিড়াল’। কারণ মাছ খেয়েই বেঁচে থাকে এই প্রাণী, আর সে মাছই এখন এদের জন্য দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোয় মাছের ঘের বা মাছের খামার হওয়ায় দুর্যোগ নেমে এসেছে এই প্রাণিকুলের ওপর। হাইল হাওরের অধিকাংশ এলাকা এখন মাছের খামার হয়ে ওঠায় এদের স্বাভাবিক খাদ্য আহরণ দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাইল হাওরের প্রাকৃতিক ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে মেছো বাঘের আবাসস্থল। অবশ্য মেছো বাঘ রক্ষায় বন বিভাগ এরই মধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি এদের প্রজনন বাড়াতে অভয়াশ্রমও গড়ে তোলা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক জলাভূমির মেছো বাঘগুলো তাদের প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এরা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এরা কোথাও গাড়িচাপা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে, আবার কোথাও হাঁসের খামার থেকে হাঁস ধরতে গিয়ে খামারিদের খাঁচায় আটকে মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া হাঁস খাওয়ার কারণে হাইল হাওরের খামারিরা মেছো বাঘগুলোকে মেরেও ফেলছেন।’ তিনি বলেন, ‘খবর পেলে আটক বা মৃত মেছো বাঘগুলো আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আটকেপড়া মেছো বাঘের খাঁচা পানির নিচে ডুবিয়ে রেখে এদের নির্মমভাবে মারা হচ্ছে।’ মেছো বাঘের খাদ্য সম্পর্কে সজল দেব আরও বলেন, ‘মেছো বাঘ বড় বড় মাছ খায়। ছোট মাছ এরা খায় না। রাতের অন্ধকারে মেছো বাঘগুলো বিলের পাড়ের ওপর দিয়ে খুব ধীরে ধীরে হাঁটে। বড় মাছ পাড়ের কাছে এলেই পানিতে নেমে সেই মাছটি ধরে খেয়ে ফেলে। কিন্তু প্রতি বছর হাইল হাওরের বিলগুলো সেচ দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলা হচ্ছে। ফলে বড় মাছ আর বিলগুলোয় অবশিষ্ট নেই। ’জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘মেছো বাঘ শুধু আমাদের জলাভূমিতেই নয়, এরা আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন। এদের শরীরের দৈর্ঘ্য ৭০-৮০ সেন্টিমিটার, লেজ ৬০-৬৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি।’ মেছো বাঘ সম্পর্কে প্রাণিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমত এই প্রাণীর খাদ্য সংকট দিন দিন বড় আকার ধারণ করছে। দ্বিতীয়ত প্রাকৃতিক জলাভূমি যখন ছিল তখন এর আশপাশে প্রচুর ঝোপঝাড় থাকত। দিনের বেলা মেছো বাঘগুলো এসব ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকত। তাদের মতে, এদের রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর