শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

উৎকণ্ঠা আছে ভ্যাট ও কর নিয়ে

রুহুল আমিন রাসেল

নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর না বাড়িয়ে ভোটারদের মনস্তুষ্টির প্রয়াস চালানো হয়েছে। তবে জনগণের কষ্ট বাড়াবে ভ্যাটের বাড়তি চাপ। শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়াতে বেশকিছু শুল্ককর সুবিধা আছে বাজেটে। আবার কোনো কোনো পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসানো হয়েছে। আমদানিতে অগ্রিম ভ্যাট ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১ শতাংশ বাড়তি ভ্যাটে বাড়বে পণ্যমূল্য। এই দেশ ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশাল এ বাজেট কতটা বাস্তবায়নযোগ্য বা অর্থ আয় ও খরচ করার সক্ষমতা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেক বিশ্লেষকের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, এবারও রাজস্ব আয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। ভ্যাট এখনো এক নম্বর খাত হওয়ায় করের অভিঘাত জনগণের ওপর চাপ বাড়াবে। বাড়বে পণ্যমূল্য। উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে সৃজনশীল কর ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত এ বাজেটে পাওয়া যায়নি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বাজেটে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব পণ্যের ওপর বিদ্যমান ভ্যাটহার বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার যে টার্গেট, তা আসবে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ককর হিসেবে। এজন্য রাজস্ব আদায়ের শর্টকার্ট পথ ভ্যাটকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ খাত থেকে আসবে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত আয়কর থেকে আসবে ১ লাখ ৭১৯ কোটি টাকা। বাকি অর্থ আয় হবে শুল্ককর থেকে।

রাজস্ব খাতে সংস্কারের উদ্যোগ : প্রস্তাবিত বাজেটে করহার না বাড়িয়ে করব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে দেশে যে ৩৫ লাখ করদাতা আছেন, তা বাড়িয়ে আগামী বছরে ১ কোটির ঘরে নিতে চান তিনি।

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ককর থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এজন্য ভ্যাট অনলাইনের নিবন্ধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

বাড়েনি করমুক্ত আয়সীমা : বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের ২৫ শতাংশের নিচে— এই যুক্তি দেখিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। সাধারণ সীমা ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। চলতি বছর করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নারী করদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির করদাতার জন্য এ সীমা কিছুটা বেশি ছিল। তবে কোনো ব্যক্তি-করদাতার প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে এরূপ প্রতি সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা হবে। বর্তমানে করমুক্তি আয়ের সাধারণ সীমা রয়েছে— সাধারণ করদাতা ২ লাখ ৫০ হাজার, নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা ৩ লাখ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-করদাতা ৪ লাখ ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা ৪ লাখ ২৫ হাজার।

দুই গাড়ি ও ৮ হাজার বর্গফুটের সম্পত্তি থাকলে সারচার্জ : সমাজে আয় ও সম্পদ বৈষম্য কমাতে সারচার্জ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে সারচার্জে সংস্কার আনা হয়েছে। এর ফলে নিজ নামে দুটি গাড়ি বা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের গৃহসম্পত্তির ওপর সারচার্জ বসানো হয়েছে।

গুগল-ইউটিউব-ফেসবুকে কর : অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের কারণে আন্তসীমান্ত লেনদেনের ধরন ও আকারে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় প্রস্তাবিত বাজেটে গুগল, ইউটিউব ও ফেসবুকে কর বসিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে করের আওতা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

ফ্ল্যাট পুনর্নিবন্ধনে ভ্যাট ২ শতাংশ : এখন থেকে যারা পুরনো ফ্ল্যাট কিনবেন তাদের খরচ কমবে। কারণ নতুন অর্থবছরে পুরনো ফ্ল্যাট পুনর্নিবন্ধনে ২ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রযোজ্য নয়টি সংকুচিত ভিত্তিমূল্য কমিয়ে পাঁচটিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবাসন খাতে ১-১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাটে ২ শতাংশ হারে, ১৬০১ বর্গফুটের ওপরে ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৪.৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বাজেটে ১-১১০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে দেড় শতাংশ, ১১০১-১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত আড়াই শতাংশ হারে এবং ১৬০১ বর্গফুট থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে মূসক আরোপ আছে।

অনলাইন কেনাকাটায় ৫ শতাংশ ভ্যাট : অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা করলে (ই-কমার্স বা এফ-কমার্স) ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। বর্তমানে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় যথেষ্ট বেড়েছে। এ পণ্য বা সেবার পরিসরকে আরও বাড়াতে ভার্চুয়াল বিজনেস নামে একটি সেবার সংজ্ঞা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনভিত্তিক যে কোনো পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এ সেবার আওতাভুক্ত করা সম্ভব হবে। তাই ভার্চুয়াল বিজনেস। এ সেবার ওপর ৪ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

স্কুলবাসে শুল্কছাড় : শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিশেষায়িত স্কুলবাস আমদানি হলে তাতে শুল্কে ছাড় দেবে সরকার। যানজট কমাতে উন্নত দেশগুলোর মতো ঢাকায় স্কুলবাস সংস্কৃতি চালু করতে চায় সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো এজেন্সি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে স্কুলবাস আমদানি করলে বিশেষ শুল্ক সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ককর ৪৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর