সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাগ বদলের ফাঁদ

মির্জা মেহেদী তমাল

ব্যাগ বদলের ফাঁদ

মহাখালীতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন আরিফুর রহমান। কিন্তু কিছুই পাচ্ছেন না। বাসা থেকে বের হতে তার দেরি হওয়ায় এই সমস্যায় পড়েছেন তিনি। আরিফ কিছু না ভেবেই একটি খালি রিকশায় উঠে পড়লেন। ভাবছিলেন, যতদূর এগোনো যায়। কিছুদূর যেতেই আরিফ হঠাৎ খেয়াল করলেন, রিকশাচালক কথা বলেই যাচ্ছেন। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলছেন তিনি!

আরিফুর রহমান এবার রিকশাচালককে প্রশ্ন রাখেন।

 ‘ভাইজান, কী বলছেন একা একা। কাকে বলছেন।’ রিকশাচালক পেছন ঘুরে তাকালেন। বললেন, ভাই আাাপনকেই বলছিলাম। আপনি কি শুনেন নাই এতক্ষণ। আরিফ বললেন, না ভাই, শুনিনি। আবার বলেন, বলার কিছু থাকলে।’ রিকশাচালক বলতে থাকেন, ‘স্যার, আমি থাকি বনানীর কড়াইল বস্তিতে। আমার দেশের বাড়ি গাইবান্ধা। আমার গ্রামের এক ছেলে সুইপারের কাজ করে। গুলশানে ওর ডিউটি। কয়েকদিন আগে এক বিদেশির বাসার ড্রেন পরিষ্কার করার ডাক পড়ে তার। বাসার ভিতরের ড্রেন জাম হয়ে যাওয়ায় লাঠি দিয়ে ধাক্কা দিতেই একটি পোঁটলা দেখতে পায় সে। ওটা হাত দিয়ে তুলে নেয়। মুখ একটু খুলতেই দেখতে পায় ভিতরে অনেক বিদেশি ডলার। সে কাউকে কিছু বলেনি। চলে আসে তার বাসা সুইপার কলোনিতে। এরপর সে আর বাসা থেকে বের হয় না। ভাবে যদি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়? এমন সব ভাবনায় চলে যায় তিন দিন। তার পরিচিত একজনকে বিষয়টি খুলে বলে। সেই পরিচিত ব্যক্তিটি তার কাছ থেকে দুই পিস ডলার নিয়ে আর আসেনি। এরপর অন্য লোকজন তার ঘরের সামনে এসে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করে। সুইপারকে অনুসরণ করে। এমন পরিস্থিতিতে সেই সুইপার আসে কড়াইল বস্তিতে।’ রিকশাচালক বলতে থাকে, ‘স্যার, সেই সুইপার আমার কাছে ছিল গতকাল পর্যন্ত। এখন নিজের কলোনিতে চলে গেছে। আমি নিজে দেখেছি ডলারগুলো। দুই বান্ডিল। ২০ ডলার করে দুই বান্ডিল। এক একটা পিস ডলার সে ৫০০ টাকায় ছাড়বে। আমার কোনো পরিচিত লোক নেই। নিজের কাছেও টাকা নেই। নইলে এই সুযোগ ছাড়তাম না।’ এমন সব কথা শুনেই আরিফের মনে লোভ জন্ম দেয়। রিকশাচালককে বলে, ‘চলেন যাই, আগে ডলার দেখি তারপর কেনার প্রশ্ন।’ রিকশাচালক আরিফকে নিয়ে যায় গুলশান ১ নম্বর গোলচক্করের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে। সেখানে আরিফকে নামিয়ে সেই সুইপারকে ডেকে আনতে চলে যায়। পাক্কা ৪৫ মিনিট পর ফিরে আসেন সেই রিকশাচালক। তার পাশে কুজো হয়ে হাঁটছিলেন আরেক ব্যক্তি। রিকশাচালক আরিফকে বলে, এই লোকই ভাই সেই সুইপার’। আরিফ সুইপারের কাছে প্রশ্ন রাখেন। কত ডলার আছে? সুইপার বলে অনেক। নগদ টাকা না দিলে ডলার দিব না। এরপর আরিফ তাকে বুঝায়, না দেখে কেউ ডলার নেবে না। আরিফ পকেট থেকে দুটো ৫০০ টাকা বের করে সুইপারের সামনে ধরে। সুইপার তার লুঙ্গির ভিতর হাত দিয়ে একটি বান্ডিল বের করল। সেখান থেকে একটি ২০ ডলারের নোট খুলে দিল। এটা পেয়ে খুব খুশি আরিফ। ওদের ফোন নম্বর নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। উত্তরায় নিজে অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। উত্তরায় যেয়ে একটি মানি চেঞ্জারের অফিসে ডলারটি বিক্রি করে ১ হাজার ৬০০ টাকা পান আরিফ। মাথা খারাপ হয়ে যায় তার। ৫০০ টাকায় ১ হাজার ৬০০! বাকি ডলারগুলো তার চাই। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। একটি ব্যাগে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ছুটে যায় আরিফ গুলশানে। আগে থেকেই ফোনে বলে রেখেছিল সে সেই সুইপারকে। সুইপারও রেডি একটি ব্যাগ নিয়ে। গুলশান গোলচক্করে যেয়ে দুজনে ব্যাগ বদল করল। সুইপারের হাতে চলে গেল ৫ লাখ টাকা। আর আরিফের হাতে ডলারের ব্যাগ। দুজন দুদিকে চলে যায়। আরিফ নিজের গাড়িতে উঠেই ব্যাগ খুলে ডলার দেখতে থাকে। আরে, ডলার তো নয়। ব্যাগ ভর্তি সাদা কাগজ!। আরিফ বুঝতে পারে, প্রতারণার শিকার তিনি। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে তার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর