শিরোনাম
বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুটপাথে ঈদবাজার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ফুটপাথে ঈদবাজার

‘এক দাম দেড়শ’, ফুরায়ে গেলে পাবেন না। এমন রকমারি হাঁকডাকে রাজধানীর ফুটপাথে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। এখন চলছে শেষ সময়ের কেনাবেচা। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে বিক্রেতাদের মুখে হাসির ঝিলিক।

রাজধানীর নিউমার্কেট, ফার্মগেট, গাউছিয়া, গুলিস্তান, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথে ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি, প্যান্ট, মেয়েদের থ্রিপিস, শাড়ি, বোরখা, শিশুদের পোশাক, বিভিন্ন বয়সী মানুষের জুতা, কসমেটিকস, টুপি, সানগ্লাস, আতর থেকে শুরু করে ঘড়ি প্রয়োজনীয় সব পণ্যই মিলছে ফুটপাথে। ঈদে নিম্নবিত্ত মানুষের ভরসা রাজধানীর এই ভাসমান ঈদ বাজার। আর এই বিক্রেতাদের পরিবারের ঈদের খুশিও নির্ভর করছে ক্রেতাদের বিকিকিনির ওপরে। নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাথে পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা আলিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা দামের পাঞ্জাবি আছে। পাজামা বিক্রি করছি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ১৫ রোজার পর থেকে বিক্রি অনেক বেড়েছে। পাশেই গেঞ্জি বিক্রি করছেন ইউসুফ আলী। বিক্রি কেমন চলছে জানতে চাইলে বলেন, ৫০ পিস গেঞ্জি নিয়ে এসেছিলাম তিন দিনে ৩৫ পিস বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি গেঞ্জি ১৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। আজকের মধ্যেই মনে হচ্ছে বাকিগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। গেঞ্জি নিয়ে দরদাম করছিলেন রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, অন্যের দোকানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করি। ঈদ উপলক্ষে বোনাস পেয়েছি। শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটা করার সামর্থ্য নাই। তাই ফুটপাথ থেকে নিজের এবং ছোটভায়ের জন্য দুটি গেঞ্জি কিনব। এখান থেকে পরিবারের অন্য সবার জন্যও কেনাকাটা করব।

ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথের পোশাক বিক্রেতা রাশেদ হোসেন বলেন, ‘আমার এখানে ছোটদের গেঞ্জি ১০০-৩০০ টাকা, প্যান্ট ২০০-৪৫০ টাকা এবং ফ্রক ৩০০-৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।’ ক্রেতা মরিয়ম আক্তার বলেন, ফুটপাথে ১৫০ টাকার জামা ৭০০ টাকা চায়। এ জন্য দরকষাকষি করে না কিনলে ঠকতে হবে। দামের তুলনায় কাপড়ের মান খারাপ বলে অভিযোগ করেন তিনি। কারওয়ান বাজার এলাকায় ৪০০-৫০০ টাকায় শার্ট বিক্রি হচ্ছে। পুরানা পল্টনে মেয়েদের ফতুয়া কামিজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা করে। এলাকা ভেদে ফুটপাথের দোকানগুলোয় ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৩৫০-৭০০ টাকা, টি-শার্ট ১৫০-৩৫০ টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ২০০-৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০-৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০-৫০০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের পোলো গেঞ্জি ২০০-৪০০ টাকা এবং মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং শাড়ি ৪৫০ থেকে দুই হাজার টাকা। ফার্মগেট থেকে থ্রিপিস কিনছিলেন ফারিয়া আক্তার। কলেজ পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, শপিং মল থেকে ঈদের একটা জামা কেনা যায় কিন্তু সব সময় পরার জন্য জামা কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য এখান থেকে থ্রিপিস, ট্রপস এগুলো কিনি। ফুটপাথে জুতার বাজারে ক্রেতাদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দামাদামির একপর্যায়ে কথা হয় জুতা বিক্রেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১০ রোজার পর থেকে আমাদের বেচাবিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। ২০০-৪০০ টাকায় বেশি জুতা বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি দামের জুতা আনলে ক্রেতারা কিনতে চায় না। তবে বিক্রি হলে একটু অসুবিধা হয়ে যায় জানিয়ে গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাথে কসমেটিক পণ্যের বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, আমার দোকানে নারীদের ভিড় বেশি। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সবাই দুল, নেলপলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের গ্লোড প্লেটের গহনা কিনছে। বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি নামলেই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান এই বিক্রেতা। পুরানা পল্টনে পোশাকের দোকানের পাশাপাশি জমে উঠেছে তসবি, টুপি ও আতরের দোকানে ঈদের কেনাকাটা। ঈদের নামাজে পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে নতুন টুপি পরার জন্য ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশ ভালো। দরদাম করে ক্রেতারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেছে নিচ্ছিলেন নিজের পছন্দের পণ্যটিকে।

সানগ্লাসের দোকানেও বিক্রি চলেছে ভালোই। ক্রেতা রিয়াজ হোসেন বলেন, সানগ্লাস তো বছরের সব সময়ই প্রয়োজন পড়ে। যেহেতু ঈদে নতুন পোশাক পরব সে জন্য মিলিয়ে অল্পের মধ্যে ফ্যাশন অনুযায়ী একটা সানগ্লাস কিনলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর