বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংশোধন হচ্ছে শালিস আইন

বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতি বাড়ানোর লক্ষ্য

আরাফাত মুন্না

আদালতের বাইরে শালিসি কার্যক্রমের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিরোধসমূহ নিষ্পত্তিতে আরও গতিশীলতা আনতে সংশোধন করা হচ্ছে প্রচলিত শালিস আইন। ২০০১ সালে প্রণীত এই আইনটিতে ৫৩টি সংশোধনী এনে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করেছে আইন কমিশন। এরই মধ্যে সবার মতামতের জন্য খসড়াটি কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় শালিসি কার্যক্রমে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে শালিসকারীদের ফি সংক্রান্ত বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় দেখা গেছে, সংশোধিত আইনে ‘শালিস’ ও ‘আদালত’ এর ক্ষেত্র, আওতা ও সময়সীমা সুস্পষ্ট করে বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে ‘আদালত’, ‘আপিল বিভাগ’, ‘শালিস’ ও ‘সালিসি ট্রাইব্যুনাল’সহ অন্যান্য শব্দের সুস্পষ্ট সংজ্ঞাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রচলিত আইনের অনেক ভাষাগত ও করণিক ভুল প্রস্তাবিত খসড়ায় সংশোধন করা হয়েছে। আইন কমিশন মনে করে, এসব সংশোধনী কার্যকর হলে সামগ্রিক বিচারিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বাণিজ্যিক বিরোধ সংক্রান্ত মামলা জট কমিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখবে প্রস্তাবিত আইনটি।

এ বিষয়ে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা (জেলা জজ) ফউজুল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালতের বাইরে শালিসি কার্যক্রমের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিরোধসমূহ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও আদালতের মামলা জট হ্রাস ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ তথা শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইনটি সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ) আইন কমিশনে আবেদন করে।

তিনি বলেন, প্রচলিত শালিস আইনে নানা ধরনের অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় সাধারণ মানুষ আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সব কিছু বিবেচনা করে আইন কমিশন আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আইনের খসড়া প্রণয়ন করে এখন সবার মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। সবার মতামত পাওয়ার পরই খসড়া চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শালিস আইনটি সংশোধিত হলে বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শালিসকারীদের ফি : প্রস্তাবিত খসড়ায় ১৪ (ক) ধারায় শালিসকারীদের ফি সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বিচারাধীন অর্থ সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত শালিসিপরিষদের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে বিচারাধীন অর্থের ১০ শতাংশ। ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। বিচারাধীন অর্থের ৩ শতাংশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। ২ শতাংশ ফি নির্ধারিত করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিচারাধীন অর্থের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ শতাংশ এবং প্রস্তাবিত খসড়ায় ৫ কোটি টাকার ওপরে বিচারাচাধীন অর্থের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে .৫০ (আধা) শতাংশ টাকা। এ ছাড়া কোনো একক শালিসকারীর ফি মূল ফির ২৫ শতাংশ বেশি হবে বলে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতা : প্রচলিত শালিস আইনে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করেছে আইন কমিশন। কমিশন বলছে, প্রচলিত আইনে ‘আদালত’, ‘আপিল বিভাগ’, ‘শালিস’ ও ‘শালিসি ট্রাইব্যুনাল’সহ অন্যান্য শব্দের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই। প্রচলিত শালিস আইনে ‘শালিস’ ও ‘আদালত’ এর ক্ষেত্র, আওতা ও সময়সীমাও সুস্পষ্ট করা নেই। এসব অস্পষ্টতা থাকায় শালিসি কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি হয় বলে আইন কমিশন মনে করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর