বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের সুখবর আসছে

আকতারুজ্জামান

বেসরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে। আগে একজন চাকরিপ্রার্থী একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করলে মেধা অনুযায়ী একাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হতেন। এতে অনেক চাকরিপ্রার্থী কোথাও নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়ায় বেকার থাকতেন। কিন্তু নতুন প্রক্রিয়ায় একজন চাকরিপ্রার্থী একাধিক আবেদন করলেও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশিসংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ পাওয়ার পথ অনেকটাই সুগম হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে এর আগে শিক্ষক নিয়োগে চাকরিপ্রার্থীরা বিভিন্ন বিপত্তির শিকার হলেও নতুন পদ্ধতিতে সেসব থেকেও রেহাই পাবেন—এমনই মন্তব্য এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের। সব মিলিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগপ্রত্যাশীদের জন্য সুখবর আসছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগামী মাসেই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে এনটিআরসিএ। এ আবেদনের ক্ষেত্রে প্রথম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ থেকে শুরু করে সর্বশেষ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাও আবেদন করতে পারবেন। সূত্রমতে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকাতে ২০১৫ সালের নভেম্বরে একটি পরিপত্রের মাধ্যমে গভর্নিং বডির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৬ সালে সারা দেশে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধনধারী চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগ পেতে অনলাইনে আবেদন করেন। একজন চাকরিপ্রার্থী ইচ্ছেমতো (যত ইচ্ছে তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে) আবেদন করতে পেরেছেন। আর আবেদনের ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে হাজার হাজার প্রার্থী বিপত্তির শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো প্রার্থী একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করে কোথাও নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হননি। কুড়িগ্রাম থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম (নবম নিবন্ধন, রোল ৪২২১১২৪০) ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছিলেন। নীলফামারীর মো. হামিদুল ইসলাম (১২তম নিবন্ধন, রোল ৩০৪০৬৯৮৭) ৪০টি স্কুলে আবেদন করেছিলেন। শেরপুরের আতিকুর রহমান (রোল ৪১৬০৮৮৯৫) উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে ১১তম শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষায় কলেজে ৮৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৯টি কলেজে আবেদন করেও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নিয়োগের জন্য মনোনীত হননি এই চাকরিপ্রার্থী। অথচ অনেক চাকরিপ্রার্থী ১০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এমন চাকরিপ্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার মহসিন আলী (১১তম নিবন্ধন, রোল ৩১৮০৪৫৭৮)। তিনি ১০টি স্কুলে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মীম নামে এক প্রার্থী (দশম নিবন্ধন, রোল ৩২১১৮৫৬৫) আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণিত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ছিলেন। একাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও তারা মাত্র একটিতেই যোগদান করেছিলেন। ফলে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পদ শূন্য থাকলেও বেকাররা এ ক্ষেত্রে নিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এনটিআরসিএর এমন নিয়োগবিধির কারণে ২০১৬ সালে একদিকে যেমন কপাল পুড়েছে চাকরি না পেয়ে হন্যে হওয়া লক্ষাধিক বেকারের, তেমনি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষও পড়েছিল বিপাকে। এক নিয়োগ সম্পন্ন করতেই তাদের দফায় দফায় আবেদনের সুযোগ দিতে হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অসংগতি এনে চাকরিপ্রার্থীরা দফায় দফায় হাই কোর্টে রিট করেছিলেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমন কোনো বিপত্তি দেখা দেবে না এমনই মন্তব্য কর্তৃপক্ষের। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান এ এম এম আজহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথমবার কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে নিয়োগ দিতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছিল। এবার সেগুলো শুধরে নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে চাকরিপ্রার্থীদের অতীতের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।’ তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে শিগগিরই আবেদনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। একজন চাকরিপ্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএসসির আদলে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চয়েস দিতে পারবেন। তবে ফলাফলে তাকে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হবে। তাই কারও হতাশার কারণ নেই। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলেও তিনি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে শিক্ষকদের শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ তালিকা ধরেই জারি করা হবে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি।

সর্বশেষ খবর