রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাসপোর্ট ভোগান্তিতে প্রবাসীরা

দেশে দেশে দীর্ঘসূত্রতা, মালয়েশিয়া সৌদি ও কুয়েতে সীমাহীন দুর্ভোগ

জুলকার নাইন

ইতালির রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রতিদিনই ভিড় করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সবার উদ্দেশ্য পাসপোর্ট নবায়নসহ নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সংগ্রহ। কিন্তু কবে পাওয়া যাবে নতুন পাসপোর্ট তার কোনো ঠিক নেই। হতাশা থেকে দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি, পরে কয়েক দফায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় দূতাবাসে। এক পর্যায়ে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া প্রবাসীদের মিশনে আসতে নিষেধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দূতাবাস। কিন্তু প্রবাসীদের অভিযোগ, অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে কয়েক মাস পর। প্রায় একই সময়ে গত সপ্তাহে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট ইস্যুতে মিশনের কর্মকর্তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন প্রবাসী এক বাংলাদেশি। সেই প্রবাসীকে পাসপোর্ট কর্মকর্তার হুমকি-ধমকির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। ইউরোপের দেশগুলোয় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নিয়ে যখন ভোগান্তির এই চিত্র তখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ও মালয়েশিয়ার পরিস্থিতি আরও করুণ। কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছে ওইসব দেশের সরকার। এসব দেশের আট লাখ প্রবাসী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে। পাসপোর্ট অধিদফতরের নিয়ন্ত্রক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফখরুল ইমাম সম্প্রতি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফর করেন। পরে তিনি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিযোগ করেন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাসপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। সেখানে গড়ে ওঠা দালালচক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন প্রবাসীরা। প্রবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট যেতে দেরি হচ্ছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাসপোর্ট দিতে বিলম্ব এবং হয়রানি না করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশও করে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় পাসপোর্টের জন্য হাহাকার এখনো কমেনি। বিদেশে থাকা বাংলাদেশের তিনটি মিশন ও ঢাকার পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘আগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট পেতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগত। কিন্তু গত বছরের শেষ নাগাদ ফেডেক্সের সঙ্গে চুক্তি করে পাসপোর্ট অধিদফতর। এ চুক্তির ফলে মাত্র দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পৌঁছে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু আগের মতোই দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে এখনো। এর পেছনে অন্যতম কারণ পাসপোর্টের বই। দেশে প্রতিদিন পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বই ছাপানো হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ হাজার বই ছাপা হচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৮ লাখ নতুন পাসপোর্টের আবেদন। এ ছাড়া যেসব মিশনে পাসপোর্ট প্রিন্টার রয়েছে, সেগুলোর কারিগরি ত্রুটিও ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রবাসীদের। কারণ কোনো কারণে একবার বন্ধ হয়ে গেলে সেই প্রিন্টার মেরামতের জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়। ঠিক করে প্রিন্টার চালু করে সংশ্লিষ্ট মিশনে পৌঁছতে পৌঁছতে ভোগান্তিতে পড়েন প্রবাসীরা।

সর্বশেষ খবর