রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

শ্রমিক নেওয়া বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মালয়েশিয়া

শ্রমবাজার নিয়ে অপতৎপরতা চলছেই মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলছেন দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মালয়েশিয়া সরকার। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশকেও জানানো হয়নি কোনো তথ্য। তার পরও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমিক রপ্তানি বন্ধের যে খবর প্রচার হচ্ছে তাকে অপতৎপরতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে জি টু জি পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। এ ধরনের চুক্তি বাতিল করতে হলে বাংলাদেশকে জানিয়েই করতে হবে। আর যেহেতু বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করতে হলে অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকেও বন্ধ করতে হবে মালয়েশিয়াকে। আর যে কোনো স্থগিতাদেশ হলেও বর্তমানে প্রক্রিয়ায় থাকা লক্ষাধিকের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও নিশ্চিত করেছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন।

জানা যায়, মালয়েশিয়ার জাতীয় পর্যায়ের একটি দৈনিক দ্য স্টার বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘মানব পাচার’ ব্যবসাকে সংগঠিত করা ও বৈধতা দেওয়ার পেছনে মালয়েশিয়ায় ‘দাতুক সেরি’ পদমর্যাদা পাওয়া এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে। এতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের চুক্তির ভিত্তিতে দুই দেশের সরকারের অনুমোদন নিয়ে নির্ধারিত কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়াদের ‘মানব পাচার’-এর শিকার বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার এক শীর্ষ নেতার প্রশ্ন, জি টু জি পদ্ধতি যদি মানব পাচার হয়, তাহলে জনশক্তি রপ্তানি কোনটা?

মালয়েশিয়ার দ্য স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম কুলাসেগারা বলেছেন, অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে মানব পাচার ও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করবে তার দেশ। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘স্থগিতাদেশ’ থাকবে। আবার একই প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রী স্টারকে এও বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগের পদ্ধতিতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আবেদন প্রক্রিয়া সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বায়রা নেতারা বলছেন, আসলে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী নৌকায় মানব পাচার করা পাচারকারী ও দালালদের বিষয়ে কথা বলে থাকতে পারেন বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সিলর মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেছেন, আমরা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখেছি। কিন্তু এমন কোনো বার্তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হাইকমিশনকে জানানো হয়নি। সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, ‘তবে এটাও ঠিক, এ ক্ষেত্রে এককভাবে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ এটি একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং এর যে কোনো সমস্যা দুই পক্ষকে বসে ঠিক করতে হবে।’ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাচ্ছেন কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানি তারা আসছেন। আর স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও বর্তমানে যারা প্রক্রিয়াধীন আছেন (প্রায় ১ লাখ) তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’

জানা যায়, ২০১২ সালে দুই দেশ শুধু সরকারি মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ১ লাখের বেশি শ্রমিক মালয়েশিয়া গেছেন কাজের জন্য। এ ছাড়া আরও লক্ষাধিক শ্রমিক দেশটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

ঢাকার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ সম্পর্কিত কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় এ বিষয়ে কোনো কিছু জানিয়ে যোগাযোগও করা হয়নি। তাই আপাতত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলেই মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর