রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুপুরের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুপুরের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ

গরমে স্বস্তি নিয়ে এসেছিল বৃষ্টি। কিন্তু সড়কে আবার সেই জলাবদ্ধতা। মিরপুর কালশী রোড থেকে গতকাল তোলা —রোহেত রাজীব

আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গতকাল ঢাকায় দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। বিশেষ করে দুপুরের দিকে ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় একদিকে রাজধানীর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ, অন্যদিকে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

ঈদের ছুটি শেষে এরই মধ্যে কর্মব্যস্ত হতে শুরু করেছে ঢাকা। যানজটের নগরী আবারও ফিরে পেতে শুরু করেছে তার চিরচেনা রূপ। গতকাল যানজট ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর বাসিন্দারা। এমনকি বেলা গড়ানোর সঙ্গে বৃষ্টিপাতের মাত্রা একদিকে যেমন বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে বৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হওয়া বজ্রপাতের তীব্র শব্দে অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নগরবাসী। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার ও তত্সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয় আছে, যা উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এর প্রভাবে গতকাল ঢাকাসহ দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমড় সমান পানি জমে যায়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কর্মব্যস্ততা। এ ছাড়াও কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এদিন বৃষ্টি-যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর, শ্যাওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, গুলিস্তান, বাড্ডা ও  সংসদ ভবন এলাকা ও গ্রীন রোডসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলোতে পানি জমে যেতে দেখা গেছে। এতে পথচারীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েন, তেমনি সড়কে চলাচলকারী প্রাইভেট কার-সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। জলাবদ্ধতার জন্য যানবাহনগুলোর অর্ধেকই পানির নিচে তলিয়ে যায়। এর মধ্যেই যানগুলোকে ধীরে ধীরে চলতে দেখা গেছে। যানবাহনের গতি কম থাকায়  মিরপুর রোড, শ্যামলী, মিরপুর ১০ এবং ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়াও নগরীর প্রধান সড়কজুড়ে তৈরি হয় তীব্র যানজট। গাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় বেশ কিছু যানকে সড়কে অচল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ঈদের ছুটিতে কয়েকদির রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকলেও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সদস্যদের এদিন যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়।  যানজটের জন্য ঢাকার বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। বিশেষ করে গ্রীন রোড, মিরপুর ১০, কারওয়ান বাজারসহ যেসব এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে গিয়েছিল, সেখানে পথচারীদের হাতে জুতাজোড়া নিয়ে পায়ের কাপড় কিছুটা গুটিয়ে নোংরা পানিতে নেমে পথ চলাচল করতে দেখা গেছে। আবার দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অনেককে রিকশায় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। কাউকে কাউকে ভ্যানগাড়িতেও চড়তে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে গতকাল গণপরিবহনের স্বল্পতাও ছিল নাগরিকদের ভোগান্তির আরেক কারণ। গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরাও এদিন যাত্রীদের কাছ থেকে লাগামহীন মূল্য দাবি করেন। ব্যবসায়ী আবুল হাসনাত ফার্মগেট থেকে বিশ্বরোডে আসতে চাইলে তার কাছে ৫০০ টাকা ভাড়া দাবি করেন এক সিএনজি চালক। মিরপুর কালশী রোডে সকালে টানা বৃষ্টির জন্য প্রধান সড়কে পানি জমে পথের পাশের দোকানপাটও তলিয়ে যায়। আর গাড়ি চলাচলের ফলে পথে জমে থাকা পানি দেখতে অনেকটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো লাগছিল। এই পানিতে নষ্ট হয়ে পড়া অনেক গাড়ি ঠেলে পথশিশুরাও দুই পয়সা আয়ও করছিল।  পথচারীরা অভিযোগ করেন যে, ঢাকায় বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা তলিয়ে যায়। 

সর্বশেষ খবর