সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরকারি ৩০ প্রতিষ্ঠানে আটকা ৩১ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারি ৩০ প্রতিষ্ঠানে আটকা ৩১ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ

সরকারি ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে আছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঋণ নেওয়া হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান সময়মতো তা পরিশোধ করছে না। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এই ঋণের প্রায় পুরোটাই গেছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮’ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩০টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ১৯টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাছে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাওনা ছিল ২৭ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১১টি আর ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতা সরকারি সংস্থাগুলো হচ্ছে : বিপিডিবি, বিএসএফআইসি, বিপিসি, বিসিআইসি, বিওজিএমসি, বিএডিসি এবং বিডব্লিউডি। এ ছাড়া বিটিবি. টিসিবি, আরইবি, বিএসইসি, বিটিএমসি, বিএফডিসির মতো সরকারি সংস্থাগুলোও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ ঋণ বকেয়া পড়ে থাকায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ওই অর্থ বিনিয়োগের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এসব ঋণের বিপরীতে সময় সময় সরকারের পক্ষ থেকে কাগুজে বন্ড দেওয়া হলেও এর সুদের হার আমানতের সুদের হারের তুলনায় কম।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। এর বিপরীতে সরকার ব্যাংকগুলোকে বন্ড দিয়ে থাকে। তবে ব্যাংক যে ঋণ দেয় সেটি  গ্রাহকের আমানতের অর্থ। এর পরিচালন ব্যয় বেশি। বন্ডের বিপরীতে সুদের হারও কম। এ কারণে আমানতের অর্থ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। মূলধন কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে টাকাটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোতে আটকে আছে, এটা যদি কোনো বিনিয়োগ প্রকল্পে বা উৎপাদনমুখী খাতে ঋণ দেওয়া হতো, তাতে ব্যাংকেরও লাভ হতো দেশেরও লাভ হতো। কিন্তু সরকারি যে সংস্থাগুলোকে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে তাতে কারও লাভ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ঋণ দিয়ে দিয়ে অনেক সংস্থা চালানো হচ্ছে। ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই। আবার দীর্ঘ সময় এই ঋণ আটকে থাকায় ব্যাংকগুলোর অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। মূলধন আটকে থাকায় অন্যত্র বিনিয়োগ করতে পারছে না তারা। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ করেই চলবে না-কি এগুলোর দক্ষতা ও উৎকর্ষতা বাড়িয়ে লাভজনক করা হবে এ বিষয়ে সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অবশ্য ঋণ পরিশোধও করেছে। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ কমেছে। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়েছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত হিসেবে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিপিডিবির ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, আগের বছর এই প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছিল ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। এবার চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বিএসএফআইসির ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা, গত বছর এই প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত ঋণ ছিল ৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিপিসির ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, গত বছরও ঋণের পরিমাণ কাছাকাছি ছিল। কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন বিসিআইসির পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, গত বছর ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বিওজিএমসি’র পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ৬৪৯ কোটি টাকা যা গত বছর ছিল ৫৭৭ কোটি টাকা। জুট মিল করপোরেশন বিজেএমসির পুঞ্জীভূত ঋণ অবশ্য কমেছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ গত বছর ৮০০ কোটি টাকা থাকলেও এবার তা কমে ৭৬১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিডব্লিউডিবির ঋণ কমে হয়েছে ৬২৩ কোটি টাকা যা গত বছর ছিল ৬২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষি উন্নয়ন করর্পোরেশন বিএডিসির পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল এক হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর