সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ ডিটিএইচের বেপরোয়া বাণিজ্য

পাচার হচ্ছে হাজার কোটি টাকা

জুলকার নাইন

ঘরে ছোট আকারের ডিস অ্যান্টেনা ও বক্স স্থাপন করে প্রধানত ভারতীয় চ্যানেল দেখার আমদানি নিষিদ্ধ ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচে বাজার সয়লাব। অবৈধ এই পণ্য প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন বিপণি বিতান ও অনলাইনে। ভারতের এক ডজনেরও বেশি কোম্পানির পণ্য ছেয়ে গেছে বাজার। বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় এসব পণ্যের এজেন্টরা অবৈধভাবে এই বিশাল বাণিজ্য চালাচ্ছেন। কৌশলে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি এসব কোম্পানির নিজস্ব এজেন্ট ও এদেশীয় দোসররা। ক্যাবল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে লাইসেন্স পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের অপর্যাপ্ততার সুযোগে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ এ পণ্য বিক্রি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের এই পণ্য দিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই চালাচ্ছেন ব্যবসা।

জানা যায়, তারের সংযোগ ছাড়াই স্যাটেলাইট টেলিভিশনে ঝকঝকে ছবি দেখার আধুনিক প্রযুক্তি ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচের সুবিধা চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও জনগণের চাহিদা-সামর্থ্যের কথা বিবেচনায় দুটি কোম্পানিকে ডিটিএইচ ব্যবসায় লাইসেন্স দেওয়া হয়। ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে ছবি ও শব্দ সাধারণ ক্যাবল সংযোগের চেয়ে দ্রুত আসে। সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ডাউনলিংকের মাধ্যমে এই সেবা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ডিস ক্যাবলের ঝুট-ঝামেলা থাকে না। এসব কারণে খুব সহজেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে এই প্রযুক্তি। কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতের টাটা স্কাই, রিলায়েন্স, ডিস টিভি, এয়ারটেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ডিটিএইচ বিক্রি হচ্ছে সর্বত্র। গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি ও বনানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর ভবনে ভবনে দেখা যাচ্ছে টাটা স্কাই, রিলায়েন্স, ডিস টিভি, এয়ারটেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ডিটিএইচের ছাতা। জানা গেল, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ এ পণ্যের ব্যবসা করে যাচ্ছেন কিছু ব্যক্তি। দুই বছর আগে র‌্যাবের অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছুটা গা-ঢাকা দিলেও চক্রটি অবৈধ এ ব্যবসা এখনো করে যাচ্ছে। ব্যবসা চলছে ই-কমার্স সাইট অনলাইন মার্কেটিং শপগুলোতে। এদের মাঝে অনলাইনের শ্রেণিকৃত বিজ্ঞাপন সাইটও রয়েছে। হোম ডেলিভারির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘরে ঘরে। প্রায় প্রতিটি পরিচিত অনলাইন শপিং সাইটে টাটা স্কাই, রিলায়েন্স, ডিস টিভি, এয়ারটেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ডিটিএইচের বিক্রির বিজ্ঞাপন আছে। শুধু বক্স ও ডিস বিক্রিই নয়, প্রতি মাসে রিচার্জও করে দিচ্ছে অবৈধ ব্যবসায়ী নামের এজেন্টরা। রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেটে কিছু দোকান আছে; তারা বিক্রি করে আবার রিনিউয়াল করে। আবার সীমান্ত এলাকায় কিছু ব্যবসায়ী এটা করে থাকে। তারা ইন্ডিয়ান ডিটিএইচ আনে এবং রিনিউয়াল করে। অনলাইনের মাধ্যমে ভারতের এজেন্টদের কাছে টাকা পাঠায়। ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ জানান, কোয়াবের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই অবৈধ ডিটিএইচের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হচ্ছে। কারণ অবৈধ ব্যবসায়ীরা চোরাইপথে এই ডিটিএইচ সামগ্রী আনছে। সেই পথেই অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। আর যেহেতু প্রতি মাসে রিনিউ করতে হচ্ছে সেখানে নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে অর্থ পাচারের পথ তৈরি করে নিয়েছে এসব এজেন্ট। প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, অবৈধ এই সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া এগুলোর মাধ্যমে দেশি চ্যানেল দেখা না যাওয়ায় চ্যানেলগুলো দর্শক হারাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

লাইসেন্স ছাড়াই ক্যাবল ব্যবসা : বাজার বা অনলাইন থেকে অবৈধ ডিটিএইচ কিনে ব্যক্তিগত ব্যবহার না করে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা করছেন বলে দাবি কোয়াব নেতাদের। তারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে একটি ডিটিএইচ কিনে পুরো এলাকার লোককে দেখিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। নিচ্ছেন মাসে মাসে ৫০০-৬০০ টাকা। তাদের কোনো লাইসেন্সও নেই। রাজস্বও দিতে হয় না। ফলে দেশে যারা ডিস চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউটর; যারা টাকা খরচ করে সরকারের কাছ থেকে চ্যানেল কিনছে তারা ব্যবসায় ধরা খাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর