সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
জেএমবির আস্তানা সন্দেহ

শ্রীপুরে বাড়িতে অভিযান অস্ত্র-বোমা উদ্ধার

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

জেএমবির আস্তানা সন্দেহে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (মাওনা আলহেরা হাসপাতাল সংলগ্ন) এলাকার এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিনটি পিস্তল ও চারটি বোমা উদ্ধার করেছে। দোতলা ওই বাড়ি থেকে আবদুর রহমান (৩৭) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তার পৈতৃক বাড়ি দিনাজপুরের দেবীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ গ্রামে। পুলিশ জানায়, গতকাল ভোরে এ অভিযান চালানো হয়। প্রথমে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার রহমতুল্লাহ চৌধুরী ও কাউন্টার টেররিজমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) আহসান হাবিব ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক মুমিন খানের নেতৃত্বে একটি টিম দোতলা বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাওনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আল আমিনের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম দুর্ঘটনা এড়াতে ঘরে পানি ছিটিয়ে দেয়। বাড়ির মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, ভোর আনুমানিক ৪টায় ঢাকা পুলিশ সদর দফতরের এক দল পুলিশ তার বাসার নিচে আসে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) পরিচয়ে তার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বাসার নিচে নামতে বলে। নিচে নেমে এলে নিচ তলার ঘর তল্লাশি করার কথা বলে পুলিশ তাকে বাসায় (ওপরে দোতলায়) চলে যেতে বলে। এক ঘণ্টা তল্লাশি শেষে সকাল ৫টায় আবার তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে পুলিশ। এ সময় তারা তার নিচ তলার ভাড়াটিয়া আবদুর রহমানকে আটক করে। তার ঘর থেকে তিনটি পিস্তল ও চারটি বোমা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। তবে পুলিশ তাকে একটি পিস্তল দেখিয়েছে। তিনি আরও জানান, আবদুর রহমান স্ত্রী শামসুন্নাহারকে নিয়ে দুই মাস আগে সাড়ে তিন হাজার টাকায় তার নিচ তলার একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি পেশায় প্রাইভেটকার চালক (ড্রাইভার) বলে বাড়ির মালিকের কাছে জানান। তবে স্থানীয় কোনো রেন্ট-এ কার থেকে এবং কারও প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে চালাতেন কিনা তা তিনি জানেন না। বাড়ির মালিকের ছোট ভাই বাচ্চু মিয়া বলেন, বড় ভাইয়ের বাসায় দুই মাস আগে আবদুর রহমান স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়ায় ওঠেন। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। তার স্ত্রী আশপাশের বাসাবাড়ির মহিলা বা কোনো পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতেন না। মাঝে মাঝে বিকালের দিকে ঘর থেকে বের হলেও মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখতেন। তার ঘরে একটি শিশু ছিল। ওই শিশু প্রায়ই কান্না করত। কয়েকদিন আগে ২ মাস বয়সী একটি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে জানানো হয় শিশুকে পালিত কন্যা হিসেবে আনা হয়েছিল।

 তিনি আরও জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৫টার সময় হঠাৎ করেই বাড়ির গেটের সামনে পুলিশ দেখা যায়। এ সময় পুলিশ কাউকে বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। পরে সকাল ৬টার দিকে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ আবদুর রহমানকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মরিয়ম আক্তার বলেন, আবদুুর রহমানের স্ত্রী সবসময় পর্দা অবস্থায় থাকতেন। কিছুদিন হলো তাদের একটি পালিত শিশু অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আমরা শুনেছি অনেক টাকা দিয়ে সে শিশুটিকে কিনে এনেছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও বগুড়া জেলা পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কাছে তথ্য ছিল ওই বাড়িতে জেএমবির চার-পাঁচজন সদস্য রয়েছে। সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত বোমাগুলো ঢাকা থেকে আসা বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট মাওনায় ওই বাড়িতেই নিষ্ক্রিয় করে। বেলা তিনটার দিকে অভিযান শেষ করা হয়।

সর্বশেষ খবর