সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
স্পেনের চিঠি

বাংলাদেশি অভিবাসীরাও দেখছেন আশার আলো

সাহাদুল সুহেদ, স্পেন থেকে

স্পেনে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসীবান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। বিগত সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারের আমলে ২০০৫ সালে অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা  প্রদান করা হয়। দেশ পরিচালনায় সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারও অভিবাসন নীতি নমনীয় করবে— এমনটি প্রত্যাশা করছেন স্পেনের অভিবাসীরা। ২০১৬ সালের ২৪ জুন স্থানীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান পেদ্রো সানচেজ অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর সানচেজ তার প্রত্যয় মোতাবেক কাজ করলে স্পেনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। আর সে তালিকায় প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীও  রয়েছেন, যারা বৈধ হওয়ার জন্য দেখছেন আশার আলো। স্পেন বরাবরই অভিবাসীদের কাছে পছন্দের একটি দেশ। বিশেষ করে সহজ শর্তে বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকায় (একসঙ্গে তিন বছর বসবাস করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৈধ হওয়া যায়) এদেশে অভিবাসীরা ভিড় জমান। দেখা গেছে, সোশ্যালিস্ট পার্টি যখন স্পেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে; তখন অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান খসে লুইস রদ্রিগেজ জাপাতেরো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় অবৈধ অভিবাসীরা সহজ শর্তে বসবাসের বৈধতা পেয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা পেয়েছেন কয়েক হাজার অভিবাসী। গত ১ জুন স্পেনের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো পপুলার পার্টির প্রধান মারিয়ানো রাখোইর স্থলাভিষিক্ত হোন সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান পেদ্রো সানচেজ। আর তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশটিতে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী সানচেজ ২০১৬ সালের ২৪ জুন একটি গণমাধ্যমে (ইউরোপা প্রেস) সাক্ষাৎকারে স্পেনে অবৈধভাবে বসবাস করা অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ও তাদের বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করার ব্যবস্থা গ্রহণের আগ্রহের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর  সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রধান সানচেজ যে অভিবাসীবান্ধব, তার প্রমাণ রাখতে শুরু করেছেন। গত ১৭ জুন ভূমধ্যসাগরে ভাসমান ৩টি জাহাজের ৬২৯ জন অভিবাসী স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় প্রবেশ করেছেন, যাদের ইতালির সমুদ্র উপকূল রক্ষীবাহিনী ইতালিতে প্রবেশ করতে দেয়নি। এদের প্রাথমিকভাবে ১ মাসের ‘রেসিডেন্স পারমিট’ প্রদান করা হয়েছে, যা আরও ৪৫ দিন বৃদ্ধি করা হবে এবং পরবর্তীতে স্পেনের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম, অভিবাসী ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী মাগদালেনা ভালেরিও। এদিকে, সোশ্যালিস্ট পার্টি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই স্পেনে অভিবাসীদের প্রবেশের হার বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) রিপোর্ট অনুযায়ী ১২ জুন থেকে ১৮ জুন ২৬২৭ জন অভিবাসী স্পেনে প্রবেশ করেছেন, যা এর আগের সপ্তাহ (৫ জুন থেকে ১১ জুন প্রবেশ করেছেন ৭৩২ জন অভিবাসী) থেকে বেশি। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা স্পেনের রেজিস্ট্রেশনকৃত মানবাধিকার সংগঠন ‘ভালিয়েন্তে বাংলা’ এর সভাপতি ফজলে এলাহী বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে পুরো স্পেনে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি বৈধভাবে স্পেনে বসবাস করার অনুমোদন পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। স্পেনের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে আমরাও দাবি জানিয়েছি এ সরকারের কাছে; যাতে অভিবাসীদের সহজ শর্তে বৈধতা প্রদান করা হয়। স্পেন থেকে প্রকাশিত একুশে পত্রিকার সম্পাদক শাহ জামাল আহমেদ বলেন, দেড় যুগ স্পেনের সোশ্যালিস্ট পার্টিকে কাছ থেকে দেখেছি। তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় মুনাফাকেন্দ্রিক  পুঁজিবাদী উন্নয়নের চেয়ে শ্রমজীবী মানুষের বেতন-ভাতা এবং নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে কর্মহীন মানুষকে সোশ্যাল সিকিউরিটির মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতাও প্রাদান করা হয়েছে। আর তাই এবারও সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারকে ঘিরে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের মনে আশার আলো দেখা দিয়েছে। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী সানচেজ তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে স্পেনে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা কিংবা সহজ শর্ত সাপেক্ষে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দেবেন।

সর্বশেষ খবর