বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংসদে সমালোচনায় রওশন এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ সরকারকে বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে। অর্থ পাচার হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে না। বেকারত্ব বাড়বে। আর বেকারত্ব বাড়লে সমাজে মাদক মহামারী আকারে রূপ নেবে। তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে চাইলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী অথবা পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এই কমিটি বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে চীনকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনিয়মের কারণে ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রওশন এরশাদ বলেন, দেশে অনেক শিল্পপতি রয়েছেন, যারা এ দেশেই বিনিয়োগ করতে চান। এ জন্য তারা জমি চান, ব্যাংক ঋণ চান, গ্যাস চান, বিদ্যুৎ চান, অনুকূল পরিবেশ চান। কিন্তু এসব চাওয়া পূরণের জন্য তাদের বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় অনেকে হয়রানির শিকার হয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১০ কোটি মানুষ কর্মক্ষম। এর মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষের চাকরি আছে। দেশের বেকারত্ব বাড়ার কারণে আজ ঘরে ঘরে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। একসময় চীনে এই মাদক সমস্যা ছিল। চীনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে সেখানে মানুষের কর্মসস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের উদ্ভাবিত পণ্য আজ সারা বিশ্বে বাজারজাত হচ্ছে। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সম্ভব। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের এটা শেষ বাজেট। বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। রওশন এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উত্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ট্রাম্পের রক্ষণশীল নীতির কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হলেও আমাদের দেশ ক্রমাগত উন্নয়নের পথে হাঁটছে। অগ্রগতি হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। রেমিটেন্স আয় বাড়ছে। সম্মৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, যে দেশ ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, সেই দেশের বাজেট প্রণয়ন করা খুব কঠিন কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী এই কঠিন কাজটি একনাগাড়ে করে যাচ্ছেন।

এ জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করে রাজনীতি থেকে অবসর না নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি লোক আয়কর দিতে সক্ষম। ৩০ লাখ লোক লিপিবদ্ধ থাকলেও কর দেন ১৩-১৪ লাখ লোক। কর আদায়ের আওতা বাড়ালে বিদেশি অর্থসহায়তা না নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘রাস্তা ও সড়কের বেহাল দশা। এ খাতের দিকে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী যেন বেশি মনোযোগ দেন এ বিষয়ে মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি। আর বিদ্যুেতর দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। অথচ বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে ভতুর্কি কমানো যাচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর