রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

পায়রা ড্রেজিংয়ে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি পাচ্ছে না বেলজিয়াম

নেওয়া হচ্ছে আরও চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের মূল চ্যানেল ড্রেজিংয়ে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কাছে রাষ্ট্রীয় (সভরেন) গ্যারান্টি চাইলেও তা পাচ্ছে না বেলজিয়াম। এর বদলে পেমেন্ট গ্যারান্টি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ‘জান ডি নুল’ (জেডিএন)’র সঙ্গে যৌথ কোম্পানি গঠন করে যে ড্রেজিং কার্যক্রম করার কথা ছিল পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের, এখন সেই কোম্পানিও হচ্ছে না। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডি নুল’ (জেডিএন)’র। এ বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ (পিপিএ) এবং জেডিএনের মধ্যে একটি যৌথ কোম্পানি গঠনে চুক্তিও হয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮০ শতাংশ ঋণ বেলজিয়ামের কাছ থেকে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তবে বন্দরটি যেহেতু এখনো গ্রিনফিল্ড প্রজেক্ট, তাই সম্পূর্ণ ঋণের (৮০ শতাংশ) বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারকে সভরেন গ্যারান্টি দিতে হবে বলে বেলজিয়াম সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। শেষে বিষয়টি নিয়ে গত দুই বছর ধরে চিঠি চালাচালির পর সম্প্রতি অর্থ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সভরেন গ্যারান্টি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রেজিং কাজটি জেডিএন সম্পন্ন করবে। এজন্য কোম্পানিটির সঙ্গে দশ বছরের চুক্তি হয়েছে। ঋণ নেওয়া হবে এইচএসবিসি ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ সরকার এইচএসবিসি-কে ঋণের বিপরীতে পেমেন্ট গ্যারান্টি দেবে। আগামী অর্থবছর থেকে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা। কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিষয়ে অনুমোদন চাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের প্রশ্ন ছিল, ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টির জন্য যে নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয়েছে তা কোনো সংস্থা গ্রহণ করবে (পায়রা বন্দর নাকি যৌথ মূলধনী কোম্পানি)? এ ছাড়া ড্রেজিং কার্যক্রম পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে না করে যৌথ কোম্পানি গঠনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন  তোলে অর্থ বিভাগ। শেষে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন গত সপ্তাহে। ওই বৈঠকে অংশ নেন অর্থসচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং পিপিপি অফিসের সিইও।

আরও ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আসছে : পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন করে আরও চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আজ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।  সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্পে তিনটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। এক : আন্ধারমানিক নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ; দুই: ব্রিজ থেকে রাবনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত পাঁচ কি.মি. দৈর্ঘ্যের চারলেন সড়ক এবং তিন : রাবনাবাদ চ্যানেলে ৬০০ মিটারের একটি জেটি নির্মাণ করা। কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের ডিপিপি চূড়ান্ত করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর