রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাহায্যকারী নয়, প্রতারক

মির্জা মেহেদী তমাল

সাহায্যকারী নয়, প্রতারক

রুমা রায়। তার হার্টের রোগ। পেশায় গার্মেন্টকর্মী। চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে খপ্পরে পড়লেন প্রতারক চক্রের। এক চক্র চিকিৎসাপত্র নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে পালিয়েছে। আরেক চক্র সাহায্যের অর্থ ছাড়ের কথা বলে বিকাশে নিয়েছে ১০ হাজার টাকা। সম্প্রতি এ ঘটনায় ওই গার্মেন্টকর্মী ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার বুনবির বিমশি গ্রামের  হেমেন্দ্র রায়ের মেয়ে রুমা রায় জানান, ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় জামাল মোল্লার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে স্থানীয় একটি গার্মেন্টে কাজ করি। এর মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে যাই। চিকিৎসক নানা পরীক্ষা করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা  নেওয়ার পরামর্শ দেয়। এতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, আমার হার্টের কোনো একটি স্থানে ফুটো হয়েছে। এ চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে ২ লাখ টাকা প্রয়োজন।

এত টাকা আমার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে জোগানো সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন করে সংবাদ ছাপা হলে সাহায্যকারীর ছদ্মবেশে কয়েকটি প্রতারকচক্র আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে সাহায্য আনার কথা বলে আমার কাছ থেকে উল্টো আমার জমানো টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে জাহিদ নামে এক প্রতারক নিজেকে কর্মসংস্থান ব্যুরোর লোক পরিচয় দিয়ে আমার চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে পালিয়েছে। পত্রিকায় কোনো সাহায্যের আবেদন দেখলেই তাদের কাছে  ফোন দেয় প্রতিষ্ঠানটির লোকজন। এর পর তারা রোগীদের ঠিকানা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করে চিকিৎসার পুরো খরচ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ জন্য ছয় হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দাবি করে। এর পরই শুরু হয় দফায় দফায় টাকা পাঠানোর অনুরোধ। ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মুমূর্ষু রোগীদের আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে এভাবেই কয়েক মাস ধরে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে সংস্থাটি।

প্রতারণার শিকার ময়মনসিংহের একটি কলেজের ছাত্র তানভীর ইসলাম। তিনি জানান, তাঁর মা কৃষি পরমাণু সহকারী কর্মকর্তা আয়েশা বেগম দুই বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসার জন্য আত্মীয়স্বজনের ঋণ ও জমি বিক্রি করে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করেছেন। চিকিৎসকেরা জানান, সুস্থ করতে আরও আট লাখ টাকা লাগবে। নিরুপায় হয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সাহায্যের আবেদন ছাপেন। তানভীর জানান, ওই আবেদন ছাপানোর পরদিন একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয় দিয়ে মেহেদী হাসান তাদের কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, আয়েশার চিকিৎসার সমুদয় অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান। এ জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে ছয় হাজার টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। অসহায় অবস্থায় এমন আর্থিক সাহায্যের কথা শুনে তিনি ছয় হাজার টাকা ওই হিসাবে জমা দেন। এর একদিন পর আবার জানায়, আট লাখ টাকা পেতে আবার ছয় হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু টাকা না থাকায় তিনি দিতে পারেননি। এ সময় তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে খুলনার  মোংলা ইপিজেডের পাঁচতলার ঠিকানা জানায়। এসব কথাবার্তায় তাঁর সন্দেহ হয়। বাধ্য হয়ে তিনি র‌্যাবকে বিষয়টি জানান। আরেক ভুক্তভোগী নাসিরুদ্দিন বলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য একটি দৈনিকে তিনি সাহায্যের আবেদন ছাপেন। পরদিনই ওই সংস্থাটি পুরো চিকিৎসা খরচ দেওয়ার কথা বলে ছয় হাজার টাকা চায়। সামর্থ্য না থাকায় তিনি ওই টাকা দিতে পারেননি। একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, তারাও বিষয়টি নিয়ে  খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু মোংলার ইপিজেডে পাঁচতলা কোনো ভবন  নেই। সংস্থাটির কোনো অফিসও খুঁজে পাওয়া যায়নি।  গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, লোকটি খুলনার  দৌলতপুর এলাকা থেকে মোবাইল ব্যবহার করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাব খুলতে এম এম ইলিয়াস, গ্রাম-জিয়াপাড়া, থানা-বাঘারপাড়া, জেলা যশোর  লেখা হয়েছে। রোগীর চিকিৎসার নামে এ ধরনের প্রতারক চক্র এখন দেশজুড়ে। রোগীর ছবি ব্যবহার করে সাহায্যের নামে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগে ছয় যুবককে  গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর