রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান বিশিষ্টজনদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাম্প্রদায়িকতার বিষমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দেশপ্রেম, স্বাধীনতার ইতিহাস এবং মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামক নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আহ্বান জানান। ‘গাহি সাম্যের গান’ স্লোগানে এই সংগঠনের আনুষ্ঠানিক যাত্রালগ্নে সমাজের নানা পেশার শীর্ষস্থানীয়রা বক্তব্য দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক দেশ চলতে পারে না। মানুষে মানুষে যদি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, ধর্মে ধর্মে সম্প্রীতি আসবে না। হানাহানি বাড়তে থাকবে।’ ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বার বার ক্ষমতা পরিবর্তন হয়, আর আঘাত গিয়ে পড়ে সংখ্যালঘু মানুষের ওপর। সেজন্য মানুষের মধ্যে ঐক্য তৈরি করা জরুরি। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে বিভাজনের উপাদান তিনটি- ধর্ম, রাজনীতি ও ব্যক্তিস্বার্থ। সেই বিভাজন দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে হত্যা করা হয়েছে, আধুনিকতাকে হত্যা করা হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে হত্যা করা হয়েছে। ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি মাহফুজা খানম বলেন, ‘তরুণ সমাজের দায়িত্ব বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়া। অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা শুদ্ধানন্দ মহাথেরো বলেন, ‘সাম্প্রায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে পারলে বাঙালিত্বও ফিরে আসবে।’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মো. আফজাল বলেন, মদিনা সনদ সব ধর্মের সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত; আর তার প্রতিফলন ঘটেছে ’৭২-এর সংবিধানে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী, মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড, তুরস্কের ফতেহ গুল ও জাকির নায়েকরা ইসলামের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দিয়েছে ও দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী গুরু সেবানন্দ বলেন, ‘ধর্মের বিভাজন নয়, ধর্মের সহাবস্থানের কথাই তুলে ধরা হয়েছে সব ধর্মে। খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার দেশ বাংলাদেশ। সম্প্রীতি বাংলাদেশের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, খণ্ড খণ্ডভাবে প্রকাশের চেয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। একাত্তরের সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, যদিও আমরা অনেক উত্থান পতন দেখেছি, তবুও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট ছিল বিভিন্ন অর্জনে। সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ইসকনের প্রতিনিধি সুখীল দাস, সংগঠনের সদস্য সচিব মামুন আল মাহতাব বক্তব্য দেন। একাত্তরে শহীদ পরিবারের সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ভিডিওবার্তা প্রচার করা হয়।

সর্বশেষ খবর