মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা আলমাসের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা আলমাসের

এক ডজন হত্যার নেপথ্যে কারিগরসহ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযুক্ত আলমাস  সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছে। চলতি বছরের ২৭ মে মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ রুবেলকে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আদালত থেকে জামিন নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। আগামী ১১ জুলাই আদালতে তার জামিন শুনানি রয়েছে। সেদিন আটকের সম্ভাবনা থেকেই তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালানোর চেষ্টা করছেন। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলার মাছিমপুর এলাকার নসুর উল্লাহ মুন্সীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ আলমাস এবং তার বাহিনীর ২০-২৫ জন মিলে মাদক ব্যবসায় বাধাদান করাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ মে রাতে নির্মমভাবে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক ও মেধাবী ছাত্র নেতা হাসান মাহমুদ রুবেলকে। এই ঘটনায় রুবেলের বড়ভাই মোমেন মিয়া বাদী হয়ে আলমাসকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রধান আসামি আলমাস গত ৩১ মে মহামান্য হাই কোর্টে জামিন আবেদন করলে তাকে আগামী ১০ জুনের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদনের নির্দেশ দেন। ঘটনার দিন সে শতাধিক আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে জামিন নিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে মহামান্য আদালত তাকে কোর্ট কাস্টডিতে প্রায় দু ঘণ্টা আটক রাখে। এর আগে মুড়াপাড়া এলাকার শিল্পপতি রাসেল ভূইয়া হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আলমাস বুঝে যায় তাকে আদালত জেল খানায় প্রেরণের নির্দেশ নিতে পারেন। পরে জামিন শুনানিকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আলমাস হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিনয় করে শুয়ে পড়েন। এতে করে বিচারক গত ২৭ জুন অবধি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আইনজীবীর জিম্মায় তাকে মুক্তি দেন। এদিকে সে আদেশে মুক্ত হয়েই আলমাস মামলার বাদী ও নিহত রুবেলের বড়ভাই মোমেনকে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় মোমেন বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করলে মামলার মূল নথির সঙ্গে জিডিটিও সংযুক্ত করে তদন্ত শুরু হয়। এসব ব্যাপার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আলমাস ২৭ জুন আদালতে হাজির না হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আরও সময় আবেদন করেন। আদালত সর্বশেষ আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে তাকে সশরীরে উপস্থিত থাকার চূড়ান্ত আদেশ প্রদান করে। সব সাক্ষী-প্রমাণ তার বিপরীতে থাকায় সরাসরি সে খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকায় এবং জামিনের বিন্দু পরিমাণ সম্ভাবনা না থাকায় সে বেনোপোল সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আলমাস রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার নোয়াগাঁও এলাকা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাকদা থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে বসতি গড়া পল্লী চিকিৎসক নগেন্দ্র ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ১০ লাখ টাকার চুক্তিতে নগেন্দ্র ডাক্তারের কাছে প্রাথমিক আশ্রয় নেওয়ার পর ইন্ডিয়ার আই কার্ড, রেশন কার্ড ও পরবর্তীতে পাসপোর্ট করে দেওয়া হবে তাকে। এরপর ভারতীয় পাসপোর্টে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রূপগঞ্জের এই সন্ত্রাসীর। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, কিলার আলমাস মুড়াপাড়া এলাকায় এক বিভীষিকার নাম। আলমাস ও তার বাহিনীর কাছে জিম্মি মুড়াপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। মুড়াপাড়ায় তার নামে পরিচালিত বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায় পুরো এলাকায়। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে হয়েছেন আরও বেপরোয়া। মুড়াপাড়া অঞ্চলে শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মানুষের জমি দখল, জমি দখল করে নিজের নামে মাছের খামার তৈরি, কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় বিক্রিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা আলমাস ও তার বাহিনীর লোকেরা করছেন না। প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান জামাল হাজীর ছেলে মুড়াপাড়া কলেজের সাবেক ভিপি খালেদ বিন জামালের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে আলমাসের উত্থান ঘটে। সন্ত্রাসী হামলায় ১৯৯১ সালে খালেদ নিহত হলে সব কিছু চলে যায় আলমাসের দখলে। এরই একপর্যায়ে ২০০০ সালে দিনদুপুরে রাসেল পার্কের ভিতরে আলমাস ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে হত্যা করে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি রাসেল ভুইয়াকে। সেই মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হলে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০০৪ সাল থেকে আবার ফিরে আসেন পুরনো ধান্দায়। শুরু করেন বিভিন্ন মিল-কারখানার মালিকদের জমিজমা জবরদখলে সহযোগিতা ও সব অবৈধ ব্যবসা।

সর্বশেষ খবর