বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
চীনের পথে পথে - ৪

সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন চীনে

জিন্নাতুন নূর, চীন থেকে ফিরে

সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন চীনে

পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুতগতির যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে চীনে। দেশটির রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা এতই আধুনিক ও সুশৃঙ্খল যে, অন্যান্য দেশের রেলযাত্রীদের এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে ঈর্ষা হতেই পারে! বলা যেতেই পারে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চীন। যাত্রী নিয়ে মাইলের পর মাইল নিমিষেই পাড়ি দিচ্ছে চীনের হাই স্পিড ও বুলেট ট্রেনগুলো। পুরো বিশ্বে যাত্রী পরিবহনের জন্য এখন পর্যন্ত আকাশপথের প্লেন চলাচলকেই সবচেয়ে আধুনিক ও দ্রুতগতি বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু চীনের আধুনিক রেল ব্যবস্থার তাক লাগানো সাফল্য ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। বিশাল আয়তনের দেশ চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে দেশটির আরেক ব্যস্ততম শহর সাংহাইয়ের দূরত্ব ১৩১৮ কি.মি.। আর দ্রুতগতি সম্পন্ন এসব ট্রেনে চীনা নাগরিকরা হাজারেরও বেশি মাইল দূরত্ব মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় পাড়ি দিচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে লক্ষ্য করা যায়, নজরকাড়া সাংহাই রেল স্টেশনটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়েও কয়েক গুণ বড়। বহুতল বিশিষ্ট এই স্টেশনে যাত্রীদের জন্য খাওয়ার রেস্টুরেন্ট, ওয়ান স্টপ মল ও স্যুভিনির-এর দোকান সবই আছে। রেল স্টেশনটি থেকে মূল সড়কে যেতে হলে যাত্রীদের রেল থেকে নেমে চলন্ত সিঁড়ি করে ওপরে উঠতে হবে। আর পর্যটক বা অন্য দেশের নাগরিকদের এসব দ্রুতগতির ট্রেনে উঠতে হলে অবশ্যই রেল স্টেশনের প্রবেশ পথ পেরিয়ে টিকিট কাউন্টারে টিকিটের সঙ্গে অবশ্যই পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে। বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশন পার করার পর যাত্রীদের জন্য যেমন খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে চীনের এই রেল স্টেশনগুলোতে আছে কেএফসিসহ বিভিন্ন খাওয়ার দোকান এবং এটিএম মেশিন। ট্রেনে ওঠার আগে নির্দিষ্ট গেটের সামনে যাত্রীরা লাইন ধরে দাঁড়ান। ট্রেন ছাড়ার সময় হলে গেট খুললে যাত্রীরা আবার চলন্ত সিঁড়িপথ হয়ে নিচে নেমে ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন ঠিক নির্ধারিত সময়েই প্লাটফর্ম ছেড়ে যায়। এক মিনিটও দেরি হয় না। বহিরাগত বা পর্যটকরা হাই স্পিড ট্রেনের ভিতর প্রবেশ করলেই চমকে উঠতে বাধ্য। প্রথম দেখায় যাত্রীর কাছে ট্রেনের এসব বগি হয়তো প্লেন বলেই মনে হবে। কী নেই সেই বগিতে! টিভি, আধুনিক টয়লেট, বার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য সুব্যবস্থা। আর ট্রেনের সিটগুলোও যাত্রা আরামদায়ক করে তোলার জন্য সুপ্রশস্ত করে বানানো হয়েছে। এতে প্লেনের সিটের মতোই খাওয়ার জন্য আলাদা বোর্ড দেওয়া হয়েছে। আছে ম্যাগাজিন পড়ার সুব্যবস্থা।  বুলেট ও হাই স্পিড ট্রেন চলাচলের জন্য গোটা চীনজুড়েই রেললাইন তৈরি হয়েছে। সেই রেললাইন কখনো মাটির সমান্তরালে, কখনো বহুতল উড়াল সড়কের পাশ দিয়ে আবার কখনো উড়াল সড়কের পিলারের নিচ দিয়েও বানানো হয়েছে। রেললাইন দিয়ে ছুটে চলছে দ্রুতগতির ট্রেন। ভিতরে বসা যাত্রীর চোখের পলক পড়তেই কাচের জানালার বাইরের দৃশ্যপট বদলে যাবে। সম্প্রতি বেইজিং থেকে সাংহাই-এ যাওয়ার পথে দেখা যায় যে, বগিতে যাত্রীদের সুবিধার্থে একটি স্ক্রিনে ট্রেনের বর্তমান অবস্থান থেকে বিভিন্ন স্টেশনের দূরত্ব ভেসে উঠছে। আবার যাত্রীদের সুবিধার্থে তা স্পিকারেও ঘোষণা হচ্ছে। কিছু সময় পর পর ট্রেনের গতিও স্ক্রিনে ভেসে উঠছে। যাত্রার তিন ঘণ্টা বাদে স্ক্রিনে যখন লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতির ট্রেনটি ৩৪৮ কি.মি/ঘণ্টা (প্রতি কি.মি ঘণ্টায়) গতিতে চলছে।

সর্বশেষ খবর