বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

খুনি নিজেই ছিলেন হত্যার প্রতিবাদ আন্দোলনে সোচ্চার

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

হত্যার পর অত্যন্ত কৌশলে খুনি নিজেই নেমে পড়ে নিখোঁজ খুন হওয়া বন্ধুকে খুঁজতে। খুন হওয়ার পরিবারকে দিতে থাকে নানা সান্ত্বনা। নিখোঁজ বন্ধুকে খুঁজে পেতে থানা পর্যন্ত যান নিজেই। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। খুন হওয়া ব্যক্তির মোবাইল সিম উদ্ধারের পরই বের হয়ে এলো খুনির আসল চেহারা। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ শহরের। নিখোঁজের ২১ দিন পর শহরের আমলাপাড়া এলাকার বন্ধুর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষের ৫ টুকরা খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত ১১টার দিকে আমলাপাড়ার ১৫ কে সি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠাণ্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালায় পুলিশ। তারা সেপটিক ট্যাংক খুলে ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে ৩টি বস্তায় প্রবীর ঘোষের ৫ টুকরো খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। তবে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হলেও উদ্ধার হয়নি দুই পায়ের হাঁটুর নিম্নাংশ। এ বাড়ির ২য় তলায় প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ভাড়া থাকতেন। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সূত্র জানায়, সেই আন্দোলনেই খুনি পিন্টু সক্রিয় ছিল। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই সে যোগ দিয়ে নিজেকে কৌশল খাটিয়ে বাঁচার চেষ্টা  অব্যাহত রাখে। কিন্তু প্রবীর ঘোষের মোবাইল সিম সব রহস্যের উদঘাটন করে দেয়। প্রবীর ঘোষের মোবাইলটি কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায় ব্যবহার হওয়ার সন্ধান পায় পুলিশ। তারা মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে এর বাহক বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করে। বাপন পুলিশকে জানায়, পিন্টু তাকে এ মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। পুলিশ বাপনকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে। এর পরপরই গ্রেফতার করা হয় প্রবীরের বন্ধু পিন্টু দেবনাথকে। জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু ও বাপন জানায়, প্রবীর ঘোষের লাশ আমলাপাড়ার ১৫ কে সি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠাণ্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে রয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে এবং ডোম নিয়ে এসে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে লাশটির খণ্ডগুলো বিকৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু দিন আগে কলকাতায় প্রবীর ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। এই প্রবীর ঘোষই কলকাতায় পিন্টুর চিকিৎসায় সহযোগিতা করে। প্রবীর ঘোষের এক ভাই দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছে। ওই ভাইয়ের দেওয়া টাকা নিয়েই প্রবীর ও পিন্টু স্বর্ণ ও সুদের ব্যবসা করছিলেন। এই টাকার একটি বিশাল অংশ পিন্টুর কাছে গচ্ছিত ছিল। প্রবীর এ টাকার জন্য কিছুদিন ধরে পিন্টুকে চাপ দিয়ে আসছিল। পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই প্রবীর ঘোষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কারণ এখনো সুস্পষ্ট নয়। গ্রেফতারকৃত পিন্টু দেবনাথ এবং বাপন ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শুধু লাশটি কোথায় আছে তা বলেছে। কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, কারা কারা জড়িত, কেনই বা হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে তারা পুরোপুরি মুখ খোলেনি। যেহেতু লাশ উদ্ধার হয়েছে পুরো ঘটনাটি এখন পরিষ্কার হয়ে যাবে। ভাইকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান ইটালি প্রবাসী ছোট ভাই সৌমিক ঘোষ জানান, আমার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর খুনিরা তাকে খোঁজার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি এরাই খুনি। অথচ এই খুনিরা আমাদের প্রতিদিনই সমবেদনার বাণী শুনিয়ে আসছিল।  এই ঘটনার পেছনে অন্য কারও হাত আছে দাবি করে কালীবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী মার্কেটের সভাপতি শঙ্কর ঘোষ বলেন, ওরা দুজন মিলে হত্যা করেনি। এই হত্যার পেছনে অন্য কারও হাত আছে। আমরা চাই, হত্যার রহস্য উন্মোচন করে হত্যাকারী এবং হত্যার পরিকল্পনাকারী সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

সর্বশেষ খবর